এ লেখা দেশের চাকরির পরিস্থিতি নিয়ে। বাস্তব পরিস্থিতি বিশ্লেষণে অনেকে ‘যত্রতত্র’, ‘হিড়িক’, ‘ব্যাঙের ছাতা’-এমন শব্দ বা শব্দমালা ব্যবহার করে থাকেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের অনুমোদন প্রদান বা গড়ে ওঠা, বলতে গেলে ঢালাওভাবে কলেজগুলোতে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালুকরণ কিংবা এসবের ব্যবস্থাপনা-বন্দোবস্তের পরিপ্রেক্ষিতে কখনো কখনো সচেতন মহল থেকে এসব শব্দ-শব্দমালা প্রয়োগ-ব্যবহার করা হয়।
ডা. দীপু মনি শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য প্রদানের সময় মন্তব্য করেছিলেন, ‘যত্রতত্র অনার্স খুলে শিক্ষিত বেকার তৈরি করা হচ্ছে, আমরা শিক্ষিত বেকার তৈরি করতে চাই না।’ ৯ জানুয়ারি ২০২০ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি।
রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ভবনে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে (ইইডি) সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে আরও মূল্যবান এবং নানা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হলেও ‘যত্রতত্র’ অনার্স খোলার ব্যাপারে খোদ শিক্ষামন্ত্রীর মুখ থেকে উচ্চারিত এমন মন্তব্যটি নিয়ে প্রচারমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে অনেক দিন বেশ আলোচিত হয়। অবশ্য এ বিষয়ে এমন মন্তব্য ও আলোচনা-সমালোচনার শুরু নব্বইয়ের দশক থেকে। বাস্তব পরিস্থিতি উপলব্ধির জন্য সাবেক এ শিক্ষামন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
গত ডিসেম্বর (২০২৩) থেকে মার্চের (২০২৪) মধ্যে দুই ধাপে ২ হাজার ১৭২ জন ওয়েম্যান নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। চতুর্থ শ্রেণির (১৯তম গ্রেড) ওয়েম্যান পদের মূল কাজ রেলপথ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
এছাড়া রেললাইনের নাট-বোল্টু টাইট দেওয়াসহ ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের কাজটিও তারাই করে থাকেন। কায়িক পরিশ্রমনির্ভর পদটিতে আবেদনের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করেছে এসএসসি বা সমমান।
যদিও সর্বশেষ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ধাপ পেরিয়ে যারা ওয়েম্যান হিসাবে চাকরি পেয়েছেন, তাদের সবার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর বা মাস্টার্স পাস।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি কাজে যোগদান করার পর অনেক ওয়েম্যানই তাদের চাকরি ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছেন। আর যারা এখনো কাজ করছেন, তারাও রেলপথ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও রক্ষণাবেক্ষণের মতো পরিশ্রমের কাজগুলো যথাযথভাবে করতে পারছেন না। ফলে ওয়েম্যান পদে বিপুলসংখ্যক জনবল নিয়োগ দিয়েও কাঙ্ক্ষিত সুফল পাচ্ছে না সংস্থাটি।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, ওয়েম্যানরা লাইন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, লাইনের অ্যালাইনমেন্ট খারাপ থাকলে সেটাকে ঠিক করা, কোথাও কাদা-মাটি জমে গেলে সেটাকে পরিষ্কার করার কাজগুলো করে থাকেন। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত তাদের কাজ করতে হয়।
কাজগুলো করতে হয় হেঁটে। সঙ্গে রাখতে হয় গাঁইতি, শাবল, কোদালের মতো উপকরণ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, ওয়েম্যানের কাজটাই হলো পরিশ্রমের। এবার যারা নিয়োগ পেয়েছেন, সবাই মাস্টার্স করা। উচ্চশিক্ষিত অনেক তরুণ এ পদে মানিয়ে নিতে পারছেন না।