‘জঙ্গিরা রেস্টুরেন্টে ঢোকার সাথে সাথেই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল। যারা নিহত হয়েছিলেন তারা সবাই রেস্টুরেন্টে নৈশভোজে এসেছিলেন। যে যেখানে ছিলেন তাকে সেখানেই হত্যা করা হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডে তারা আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করেছিল। এরপর তারা আইএসআইয়ের কালো পোশাক পরে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছিল। দ্রুত অপারেশন শেষ হলে ধীরে ধীরে ভিতরে গিয়ে তল্লাশি করে মরদেহগুলো পাওয়া গেলো। পাঁচজন জঙ্গির মরদেহ বাইরে পড়ে ছিল। সেনাদল চলে যাওয়ার পর পর পুলিশ ঘটনাস্থল বুঝে নেয়।
সিআইডির ক্রাইম সিন ইনভেস্টিগেশন দল আসে। প্রাথমিক তদন্ত, আলামত জব্দ, মরদেহের সুরতহাল তৈরি করে হাসপাতালের মর্গে পোস্ট মর্টেমের জন্য প্রেরণ করা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা ছিল নজিরবিহীন। সেদিনের সেই মর্মান্তিক ঘটনায় জঙ্গিরা দেশি-বিদেশি ২৪ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। তাদের মধ্যে দুজন পুলিশ অফিসার ছিলেন। নিহতদের মধ্যে ৯ জন ইতালিয়ান, ৭ জন জাপানি এবং একজন ভারতীয় ছিলেন। আহত হয়েছিলেন প্রায় ৪০ জন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পুলিশ সদস্য। ওই ঘটনার পর জঙ্গিদের বিষয়টি আমার একান্ত এখতিয়ারে নিয়ে এসে দেশব্যাপী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করি। (এ কে এম শহীদুল হক, পুলিশ জীবনের স্মৃতি, ২০২২, পৃ ২৮৫-২৮৬)
আজ থেকে আট বছর আগে (২০১৬) বাংলাদেশের ইতিহাসে মর্মন্তুদ ঘটনা ঘটে। কারণ সেদিন ১৭ জন বিদেশিকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে ধর্মীয় উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা। ওই দিন হামলাকারীদের গুলি ও বোমাবর্ষণের ফলে চার পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। তবে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী, পুলিশ, র্যাব এবং যৌথবাহিনীর সফল অভিযানের ফলে ছয়জন বন্দুকধারী সন্ত্রাসী মারা যায় এবং একজনকে গ্রেফতার করা হয়।
রাত ৯টা ২০ মিনিটে, নয়জন জঙ্গি সদস্য ঢাকার গুলশান এলাকায় অবস্থিত হলি আর্টিসান বেকারিতে গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করে এবং কয়েক ডজন মানুষকে জিম্মি করে। ওই ঘটনায় মোট আঠাশ জন মানুষ নিহত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনা করে। রাত থেকেই সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে অবস্থানরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব অপারেশন থান্ডারবোল্ট পরিচালনা করে।