ব্যাংকিং খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঋণ বিতরণ ও আমানত সংগ্রহের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে খেলাপি ঋণের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকিং খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেলাপি ঋণ শুধু ব্যাংকিং খাত নয়, বরং সামষ্টিক অর্থনীতির জন্যও বিপৎসংকেত।
বাংলাদেশের মুদ্রা ও ঋণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এগারো বছরে ব্যাংক ব্যবস্থার অধীনে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ও আমানতের পরিমাণ ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা নিচের লেখচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো—
অভ্যন্তরীণ ঋণের খাতকে তিনভাগে ভাগ করা যায়—সরকারি খাত, রাষ্ট্রায়ত্ত খাত ও বেসরকারি খাত। মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বেসরকারি খাতের ঋণ যার পরিমাণ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১৫৭৬৯৩৬.৪০ কোটি টাকা। এই সময়ে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ছিল ২০০৪১০৮.৭০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের ৭৮.৬৯ শতাংশ বেসরকারি খাতের ঋণ এবং বাকি ১৮.৯৪ শতাংশ সরকারি খাতের ঋণ।
অন্যদিকে আমানতের দিকে তাকালে দেখা যায়, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমানতের পরিমাণ বাড়লেও তা বৃদ্ধির পরিমাণ ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণের তুলনায় কম।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ছিল ৬,৪৯,৪৪০ কোটি টাকা। একই সময়ে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ছিল ৬,৩৭,৯০৬ কোটি টাকা। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে আবার ঋণের পরিমাণও বেড়েছে।
তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে ব্যাংকে আমানতের পরিমাণের চেয়ে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ বেশি হতে শুরু করে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আমানতের পরিমাণ সাড়ে সতেরো লাখের কাছাকাছি হলেও অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ২০ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এই ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণের বড় ভূমিকা থাকতে পারে।
ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী কোনো ঋণ বা তার কিস্তি যখন নির্দিষ্ট সময় পর ফেরত পাওয়া যায় না তখন তাকে খেলাপি ঋণ বলে। এক দশকের খেলাপি ঋণের দিকে তাকালে এর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাই লক্ষ্য করা যায়।