লক্ষ লক্ষ ভক্ত পূজারি ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ঢাকেশ্বরী মন্দির বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উপাসনালয়। নিয়মিত পূজার্চনার পাশাপাশি শারদীয় দুর্গাপূজা, সরস্বতী পূজা, কালিপূজা, শনিপূজা, শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী, রথযাত্রা উৎসব, দোলযাত্রা, দিপালী থেকে শুরু করে প্রতি মাসে কোন না কোন পূজাকে ঘিরে ভক্তকূল থাকে উৎসব মুখর।
পূজা আয়োজনের বাইরে মহান সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ প্রাপ্তির আশায় মন্দিরের মেলাঙ্গনে বিবাহ অনুষ্ঠান, অন্নপ্রাশন, প্রয়াতের আত্মার শান্তি কামনায় শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মনিষীদের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীর পাশাপাশি ধর্মীয় সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনতো আছেই। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় হওয়ার কারণে বিজয়া পুনর্মিলনী, পরিবার দিবসসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতো রয়েছেই।
উৎসবমুখর থাকা, দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দেশ-বিদেশের পর্যটকদেরও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মরিশাসের রাষ্ট্রপতি পৃথ্বীরাজ সিং রূপনসহ বিশ্বের হিন্দুধর্মের শীর্ষ ব্যক্তিরা বাংলাদেশ সফরকালে একবার হলেও ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন ও পূজা দিতে আসেন।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সংখ্যা বেশি বলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপির ভাবমূর্তি বৃদ্ধি ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট নামে একটি নামধারী সংগঠনের ব্যানারে বিএনপির এজেন্ট কতিপয় ব্যক্তি নতুন ষড়যন্ত্রে নেমেছে।
সম্প্রতি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালনের নামে তাদের ষড়যন্ত্রের নতুন ডালপালা ছড়াতে অপচেষ্টা শুরু করেছে। সংখ্যালঘুদের নির্যাতন প্রতিরোধে আজ পর্যন্ত ঐ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট নামের কোনো সংগঠনের কার্যক্রমতো কারো চোখে পড়ে নাই। হঠাৎ করে ঢাকেশ্বরী মন্দির কেন্দ্রিক তাদের রাজনীতি ও সংখ্যালঘুদের জন্য মায়া কান্নায় নতুন ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি।
ষড়যন্ত্রকারীদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই তারা কি ভুলে গেছেন বৈদ্যুতিক আর সহস্র প্রদীপের আলোয় আলোকিত ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সেই নিকষ কালো অন্ধকার অধ্যায়ের কথা? পাকিস্তান আমলে এবং বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরও বি়ভিন্ন সময়কালে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দ্বারা বার বার আক্রান্ত হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের আবেগ ও ভালোবাসার এই পবিত্র অঙ্গন।
পাকিস্তান সৃষ্টির পরেই ১৯৫০ সালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হামলা হয়। লুট করা হয় মন্দিরের স্বর্ণালংকার। ১৯৬৪ সালের দাঙ্গার পর বেশ কিছুটা সময় মন্দিরে পূজা অর্চনা বন্ধ থাকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মন্দিরটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মন্দিরের অর্ধেকের বেশি ভবন ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। প্রধান ভবনটি দখল করে পাক হানাদার বাহিনী গোলাবারুদ রাখার গুদামে পরিণত করে।