সম্প্রতি দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে। ২১ জুন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, পবিত্র ঈদুল আজহার আগে ১২ জুন দেশে মোট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪৫২ কোটি মার্কিন ডলার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২৬ কোটি ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ১৯ জুন পর্যন্ত রিজার্ভ হয়েছে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার। একই সময়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুসারে রিজার্ভ বেড়েছে ৩১ কোটি ৮২ লাখ ডলার। জুনের শুরুতে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৮৭২ কোটি ডলার। এ হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী ১২ ও ১৯ জুন রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৭ লাখ ডলার এবং ১ হাজার ৯৫২ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। এছাড়া মের শুরুতে মোট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৫৩৭ কোটি ডলার। দ্বিতীয় সপ্তাহে আমদানি বিল বাবদ রিজার্ভ থেকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নকে (আকু) ১৬৩ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়। ফলে ১৫ মে রিজার্ভ ২ হাজার ৩৯০ কোটি ডলারে নেমে আসে। ওই সময়ে বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ হয় ১ হাজার ৮৪২ কোটি ডলার। পরবর্তী পাঁচ সপ্তাহে রিজার্ভ বৃদ্ধির প্রবণতা আশাজাগানিয়া পর্যায়ে পৌঁছে।
এটি সর্বজনবিদিত যে, একটি দেশের আমদানি ব্যয় মেটানো, বাজেট বাস্তবায়ন, বৃহৎ প্রকল্পে অর্থের জোগান, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ, আর্থিক বিপর্যয় মোকাবিলা, স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন রোধ, মুদ্রানীতি শক্তিশালীকরণসহ নানামুখী অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতিবিদদের মতে, কোনো দেশে তিন মাসের মোট আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থাকলে তা মোটামুটি নিরাপদ। আবার দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জমে থাকাও অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়। অতিরিক্ত রিজার্ভ অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়া এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি আশানুরূপ না হওয়াকেই ইঙ্গিত করে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত হচ্ছে-রপ্তানি আয়, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রবাহ, দাতা সংস্থা বা সহযোগী রাষ্ট্রের ঋণ-অনুদান ইত্যাদি।
বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে মজুত স্বর্ণসহ সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ২৭ কোটি ৪ লাখ মার্কিন ডলার। ২০০০ সালের পর থেকে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির দৃশ্যপট স্পষ্ট হতে থাকে। ২০০১-০২ অর্থবছরে ১৫০ কোটি ডলারের রিজার্ভের বিপরীতে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে রিজার্ভ ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। ২০১২-১৩ অর্থবছর ছিল বাংলাদেশের রিজার্ভের ইতিহাসে স্মরণীয় বছর। ওই বছর রিজার্ভ ১৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ২০০০ কোটি ডলারের রিজার্ভের মাইলফলক স্পর্শ করে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৫০০ কোটি ডলার এবং পরের বছরই তা ৩০০০ কোটি ডলারে উঠে যায়। এ হিসাবে মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের রিজার্ভ বাড়ে ১০০০ কোটি ডলার। পরবর্তীকালে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রিজার্ভ ৩৬০০ কোটি ডলারে উপনীত হয়। করোনা মহামারির মধ্যেই ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভ উঠে যায় ৪৮০০ কোটি ডলারে। এখন পর্যন্ত এটিই বাংলাদেশের রিজার্ভের সর্বোচ্চ রেকর্ড।