বাংলাদেশ রেলওয়েতে বছরে বিক্রিযোগ্য টিকিট বরাদ্দ থাকে কমবেশি ৫ কোটি ১০ লাখ। রেলমন্ত্রীর দেওয়া তথ্যমতে, ২০২৩ সালে রেলওয়ে টিকিট বিক্রি করেছে প্রায় ৩ কোটি ৪৫ লাখ। সে হিসাবে টিকিট অবিক্রীত থেকেছে ১ কোটি ৬৫ লাখ, যা মোট টিকিটের ৩২ শতাংশ। টিকিট অবিক্রীত থাকায় বিপুল পরিমাণ আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রেলওয়ে। যদিও আন্তনগর ট্রেনগুলোয় আসন ফাঁকা আছে এমন চিত্র সচরাচর দেখা যায় না। বরং কোনো কোনো রুটে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে ট্রেনগুলো।
রেলের এক-তৃতীয়াংশ টিকিট অবিক্রীত থাকার পেছনে বিনা টিকিটে যাত্রীদের ভ্রমণকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অভিযোগ রয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্টেশনে বিনা টিকিটে যাত্রী পরিবহনে বিশাল সিন্ডিকেট কাজ করে। ট্রেনের ভেতরে দায়িত্ব পালনকারী টিটিই, সিকিউরিটি গার্ড, আনসার সদস্য এবং খাবার বিক্রির কাজে নিয়োজিতরা এই সিন্ডিকেটের সদস্য। তারা বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন থামলে টাকার বিনিময়ে বিনা টিকিটের যাত্রী তোলেন ট্রেনে।
রেলওয়ে সূত্র জানা যায়, দেশে লোকাল, মেইল ও আন্তনগর ট্রেনের প্রায় অর্ধেক যাত্রীই টিকিট কাটেন না। শুধু কমলাপুর স্টেশন থেকেই দিনে প্রায় ৩০ হাজার যাত্রী বিনা টিকিটে স্বল্প ও অধিক দূরত্বে ট্রেন ভ্রমণ করেন। সারা দেশে ১০৬টি আন্তনগর ট্রেনে যে সংখ্যক যাত্রী বিনা টিকিটে ভ্রমণ করেন, তাতে দিনে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আয়বঞ্চিত হয় রেল। আন্তনগরের পাশাপাশি লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেনগুলোর বিনা টিকিটের যাত্রী হিসেবে নিলে দৈনিক গড়ে ৩ কোটির টাকার বেশি আয়বঞ্চিত হচ্ছে রেলওয়ে। এ কারণে লোকসান থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রেল।
রেলওয়ের আয়ের প্রধান খাত যাত্রী পরিবহন। রেলের মোট আয়ের ৬০ শতাংশের বেশি যাত্রী পরিবহন এবং ২০ শতাংশ আসে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে। ১০ জুন সংসদে রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম জানিয়েছেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের রেলওয়ে মোট ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। আর আয় ছিল ১ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। এতে দেখা যায়, এক টাকা আয় করতে প্রায় দুই টাকা খরচ হচ্ছে রেলের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিনা টিকিটে ভ্রমণ ও রেলের নিজস্ব আইটি পদ্ধতির উন্নতি না হওয়ার কারণে রেল টিকিট বিক্রি করতে পারছে না। চাহিদাসম্পন্ন রুটগুলোতে টিকিট বিক্রি হলেও সারা দেশে বেশির ভাগ স্টেশনে বিনা টিকিটে ভ্রমণের ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।