শক্তিশালী মাদক প্রতিরোধ কার্যক্রম জরুরি

যুগান্তর ড. অরূপরতন চৌধুরী প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২৪, ১৩:০৮

আজ ২৬ জুন আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। এ দিবসটিকে আরও বলা হয় ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’। জাতিসংঘের মাদকবিরোধী কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (এনওডিসি) এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে-‘The evidence is clear: invest in prevention’, যার ভাবানুবাদ হলো-বর্তমান প্রজন্মকে মাদকমুক্ত রাখতে প্রয়োজন শক্তিশালী প্রতিরোধ কার্যক্রম। অর্থাৎ মাদকাসক্তি সমস্যার সামগ্রিক প্রমাণ সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। সুতরাং মাদক সমস্যা প্রতিরোধ, সর্বোপরি প্রতিরোধ কার্যক্রমের প্রতি জোর দিতে হবে। মাদক প্রতিরোধে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।


বাংলাদেশে অনেক সামাজিক সমস্যা বিদ্যমান। এর মধ্যে মাদকাসক্তি একটি বড় সমস্যা এবং এটি বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করেছে। বস্তুত মাদকাসক্তি একটি রোগ। মাদকদ্রব্য, ধূমপান ও তামাক সেবন মানুষের অকালমৃত্যু ও স্বাস্থ্যহানির অন্যতম কারণ। মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে আমাদের তরুণ প্রজন্মের বিপথগামিতাও সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, বর্তমানে দেশের বড় অংশের জনগোষ্ঠী কিশোর-তরুণ, যে কারণে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীকে বলা হয় ইয়থ ডিভিডেন্ড। আর উদ্বেগজনক তথ্য হচ্ছে, দেশে ইয়াবা সেবনকারী ৮৫ শতাংশই তরুণ। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।


মাদকাসক্তদের মধ্যে ৯৮ শতাংশই ধূমপায়ী এবং তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত, যা গবেষণায় প্রমাণিত। ধূমপানে অভ্যস্ততার মধ্য দিয়ে তরুণরা মাদকদ্রব্য সেবন শুরু করে থাকে। পরবর্তীকালে ইয়াবা, ফেনসিডিল, সিসা, হেরোইন, কোকেন, আফিম, কোডিন, মরফিন, এলএসডিসহ বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হয়। ক্রমান্বয়ে মাদকাসক্তরা কিডনি, লিভার, মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। সুনাগরিক হিসাবে গড়ে উঠতে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য তরুণদের ধূমপান, মাদকসহ সব নেশা থেকে দূরে থাকা জরুরি। কিন্তু মাদকের সঙ্গে জড়িত অসাধু চক্র আমাদের যুবসমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। তরুণদের মাদকের রাজ্যে টানতে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করছে অসাধু মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিরা। এটিও বড় চ্যালেঞ্জরূপে আবির্ভূত হয়েছে।


গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যবিবরণীতে জানা যায়, গত ১০ বছরে নেশাখোর সন্তানের হাতে প্রায় ২০০ বাবা-মা খুন হয়েছেন, স্বামী হত্যা করেছে স্ত্রীকে, স্ত্রী হত্যা করেছে স্বামীকে। খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ, পরকীয়া, দাম্পত্য কলহ, অর্থ লেনদেন, সন্ত্রাসী কার্যক্রম-সবকিছুর মূলে রয়েছে এই মাদকের নেশা। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। সেই মানুষ মাদকের নেশায় হয়ে ওঠে হিংস্রদানব, নরপশু। সামাজিক মূল্যবোধের এই যে চরম অবক্ষয়, তা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।


বর্তমানে মাদকজনিত অপরাধের মধ্যে অন্যতম হলো কিশোর গ্যাং। মাদকের খরচ জোগাতে কিশোর ও কিশোরী উভয়ই এ অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারী গ্যাংয়ের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করছে। মাদক ব্যবসা, খুন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ছিনতাই, রাস্তায় পরিকল্পিত সংঘাত তৈরির মাধ্যমে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চাঁদাবাজির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে সক্রিয় অপরাধীচক্র কিশোর গ্যাং। সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা, অভিযান ও গ্রেফতার বাড়লেও কিশোর গ্যাং সদস্যদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই সামনে আসছে নতুন নতুন গ্যাংয়ের নাম। মাদক সমস্যা প্রতিরোধে অন্যতম প্রতিবন্ধক হয়ে উঠছে এসব কিশোর গ্যাং। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির আওতায় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমন্বিত প্রতিরোধ কার্যক্রম জরুরি-যেখানে মনোসামাজিক, নৈতিক ও সামাজিকীকরণ শিক্ষা প্রদানের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকা প্রয়োজন।


মাদক বিস্তারের একটি বড় উপাদান হলো তামাকজাত দ্রব্য। গবেষণায় দেখা যায়, মাদকাসক্তদের মধ্যে ৯৮ শতাংশই ধূমপায়ী এবং তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। যারা মাদকসেবন করে, তারা প্রথমে ধূমপানে অভ্যস্ত হয়, তারপর মাদকদ্রব্য সেবন শুরু করে থাকে। পরবর্তীকালে তারা বিভিন্ন মরণনেশায় আসক্ত হয়। ফ্যাশন হিসাবে অসংখ্য তরুণ আজকাল মাদকসেবনের দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছে। এগুলো মানুষকে ক্ষতিকর নেশাদ্রব্য গ্রহণে বা সেবনে উদ্বুদ্ধ করে। বিষণ্নতা থেকে মাদক গ্রহণ, এমনকি জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে অনেকে। তরুণ জনগোষ্ঠীকে মাদক ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে হবে। সুনাগরিক হিসাবে গড়ে ওঠা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য তরুণদের ধূমপান, মাদকসহ সব ধরনের নেশা থেকে দূরে থাকা জরুরি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us