টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আনুষ্ঠানিক পর্দা নামতে আরও কয়েকদিন বাকি। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য ইতিমধ্যেই এই বিশ্বকাপ শেষ। অঙ্কের হিসাবে এটাকে অনেকেই বলে থাকবেন সফল এক বিশ্বকাপ মিশন। তিনটা ম্যাচে জয়, সেরা আটে ঠাঁই পাওয়া। এসবই তো বলতে গেলে কুড়িয়ে পাওয়া চৌদ্দ আনা। অনেকটাই অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি।
বিশ্বকাপের ঠিক আগে আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হারার পর খুব বেশি মানুষ তাও আশা করেনি। কিন্তু মানুষ আশা না করলে কী হবে। সময় বাংলাদেশকেই ঠিকই বড় একটা সুযোগ এনে দিয়েছিল আরও অনেক ভালোভাবে বিশ্বকাপ শেষ করার। সেরা আট পেরিয়ে সেমিফাইনাল খেলার সুযোগটা এসে গিয়েছিল হঠাৎ করেই।
নিজেদের কোনো কৃতিত্বে নয়। অন্যদের ব্যর্থতায়। কিন্তু বাংলাদেশ সেই সুযোগও কাজে লাগাতে পারেনি। এবং তাও একেবারেই নিজেদের দোষে। সুযোগ তারা কাজে লাগাতে আদৌ চেয়েছিল কিনা সেই প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে। সাহসের ঘাটতিতো ছিলই। সাথে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিটাও দৃষ্টিকটুভাবে প্রকট হয়েছে তাদের খেলায়।
অথচ স্বপ্নটা হাতের নাগালেই ছিল। প্রয়োজন ছিল কেবল শেষ ম্যাচে সামান্য একটু ভেলকি। আফগানিস্তানের সঙ্গে ভালো ব্যবধানে একটা জয়। আরও নির্দিষ্ট করে বললে ১২.১ ওভারে জয়। বোলাররা হৃদয় উজাড় করে চেষ্টা করেছেন। আফগানিস্তানকে তারা বেঁধে রাখে ১১৫ রানে। কিন্তু ব্যাটিংয়ে এসে যথারীতি লেজেগোবরে করে ফেলে বাংলাদেশ। ম্যাচ হেরে যায় তারা আট রানে।
ব্যাটিং ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে পুরো বিশ্বকাপ জুড়েই। কিন্তু শেষ ম্যাচে এসে যা হয়েছে তাতে এটা আর ভোগান্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি রীতিমতো মর্মপীড়ার জন্ম দিয়েছে। একটা দল, যারা কি না বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলতে চায়, মাত্র তিন ওভার পর তারা হাল ছেড়ে দিয়েছে।
কেউ কেউ বলে থাকবেন এরপরও তো তারা জয়ের জন্যই খেলেছে। কিন্তু হায়! এমন জয় তো কতই আছে। সেইসব জয় খেলোয়াড়রাই হয়তো দুইদিন পর মনে রাখনেনি। সবাই মনে রেখেছে কষ্টের স্মৃতিগুলো। এই স্মৃতিটাও বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের নিশ্চিতভাবে তাড়া করবে অনেকদিন।
সত্যি বলতে, সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা বাংলাদেশ দল গত আসরেও জাগিয়েছিল। সেইজন্য শেষ ম্যাচে তাদের পাকিস্তানকে হারাতে হতো। কিন্তু সেই ম্যাচে বাংলাদেশ কোনোভাবেই জয়ের সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি। মানুষও তাই ম্যাচটা দ্রুতই ভুলে গিয়েছে।
সবাই মনে রেখেছে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের স্মৃতি। ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতকে বাংলাদেশ ভালোই চাপে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু নানা অন্যায় অবিচারের শিকার হয়ে শেষ পর্যন্ত তারা পারেনি। তার জন্য না হয় আম্পায়ারকে দায়ী করা চলে। কিন্তু এবার কাকে দায়ী করবে বাংলাদেশ?
অন্যায় যদি এই ম্যাচে কিছু হয়েও থাকে তা বাংলাদেশ নিজেরাই করেছে, নিজেদের সাথে। নিজেদের সামর্থ্যের ওপর নিজেরাই বিশ্বাস রাখেনি। না হয় লিটন আর তৌহিদ হৃদয় ছাড়া বাকিদের ব্যাটিং এই ম্যাচে এমন খাপছাড়া মনে হবে কেন?