দুর্নীতিপরায়ণ ‘সুপারম্যান’ বাবা ও তাদের সন্তানরা

জাগো নিউজ ২৪ শাহানা হুদা রঞ্জনা প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২৪, ১৩:০০

প্রায় সব সন্তানের কাছেই তাদের বাবা সুপারম্যান। কারণ তারা বড় বড় হতে হতে দেখে বাবা ক্ষমতাবান, বাবা আয় করেন, বাবাই সবার চাহিদা মেটাতে কাজ করে যাচ্ছেন, বাবা অসুস্থ হলে বা বাবা না থাকলে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। সময়ের সাথে সাথে এখন মায়েরাও সংসারের আয়ের হাল ধরেছেন। কিন্তু এরপরেও অধিকাংশ পরিবারে এখন পর্যন্ত বাবারাই মূল চালিকা শক্তি। বাবারাই সন্তানের খাওয়া-পড়ার খরচ যোগান, আব্দার মেটান, অকুণ্ঠ ভালোবাসা দেন, পথ দেখান, ন্যায়-অন্যায় বোধ জাগিয়ে তোলেন। আমার বাবা আমার জীবনের আদর্শ। তার ছোট ছোট আচরণও আমি লক্ষ্য করেছি ও মেনে চলার চেষ্টা করেছি।


সেইসময় বাবার আয়ের উপর নির্ভরশীল ছিল অধিকাংশ পরিবার। সৎ পথে থেকে কষ্ট করে আয় করতে হতো বলে তাঁর দেয়ার হাত ও আমাদের চাওয়াটাও ছিল সীমাবদ্ধ। হয়তো তাঁরও ইচ্ছা করতো সব থেকে ভালো ও দামি জিনিষটা আমাদের হাতে তুলে দিতে, হয়তো চাইতেন আমাদের সব চাহিদা পূরণ করতে। কিন্তু তাঁর সাধ্যের মধ্যেই ছিল সব সাধ, আমাদেরও তাই। আমাদের ‘সুপারম্যান’ বাবা হয়তো ১৫ লাখ টাকার খাসি, ২ কোটি টাকার ফ্ল্যাট, দামি গাড়ি, ৩ লাখ টাকার শাড়ি বা লেহেঙ্গা কিনে দিতে পারেননি কিন্তু দিয়েছেন ভালবাসা, নির্দেশনা ও শিক্ষা, যা আমাদের সম্মানিত করেছে, লজ্জিত করেনি।


আব্বা যখন আমাদের হাতে হঠাৎ কোন উপহার বা সামান্য দামি পোশাক এনে দিয়েছেন আমরা জানতে চাইতাম আব্বা এখন এটা কিনলে কেমন করে, টাকা পেলে কোথায়? এমনকি ১৯৮৩ সালে চরম আর্থিক অনটনের সময় আব্বা যখন ৩০০ টাকা দিয়ে আমাকে ইতিহাসের একটা রেফারেন্স বই কিনে দিয়েছিলেন, তখনও আমি বিস্মিত হয়েছি। একটা অপরাধবোধ আমাকে চেপে ধরেছিল। মনে হয়েছিল আব্বা এত কষ্ট করে আমাকে যে বইটি কিনে দিয়েছেন, আমি যেন তার এই ভালবাসার সম্মান রাখতে পারি।


আজকে যারা চোর-বাটপার পরিবারের সন্তান, তারা কখনো কি তাদের বাবার আয়ের পরিমাণ ও উৎস জানতে চেয়েছেন? কোন স্ত্রী কি জানতে চেয়েছেন স্বামী কেন, কোথা থেকে এত টাকা আয় করছেন এবং স্ত্রী-সন্তানের নামে গচ্ছিত রাখছেন? কোন সন্তান কি জানতে চেয়েছেন তাদের চাকুরে বাবা ডজন খানেক বাড়ি বানাচ্ছেন কিভাবে?


বেনজীর আহমেদের মেয়ে কি জানতে চেয়েছেন, তার আরাম নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে কিভাবে কোটি টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন তার চাকুরিজীবী বাবা? কিভাবে মতিউর তার ছেলে ইফাতকে ১৫ লাখ টাকার খাসি ও ৭০ লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনে দিতে পারছেন? মতিউরের স্ত্রী কি জানতে চেয়েছেন ৭০ হাজার টাকা বেতনের কর্মকর্তা তার স্বামী কিভাবে স্ত্রীকে তিন কোটি টাকা দিতে পেরেছেন?


দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতিটি সদস্যই আসলে একজন অপরাধী হয়ে বড় হতে শেখে। এইসব পরিবারের গৃহিনীরা স্বামীর অর্জিত সম্পদ ব্যবহারে এমনভাবে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন যে, তাদের মধ্যে কোন পাপবোধ কাজ করে না, বরং অহমিকা বাড়তে থাকে। সম্পদ গিলতে গিলতে এরাও হয়ে ওঠেন সম্পদখেকো। কার টাকা, কোথা থেকে এলো এই টাকা, কেন এলো এই টাকা এসব নিয়ে কোন প্রশ্ন করার মতো মানসিকতা তাদের থাকে না।


প্রতিটি পেশায় যারা দুর্নীতিবাজ, যারা বেশুমার অর্থ সম্পদের মালিক, তাদের সন্তানরা বাপের সম্পদ শুধু ভোগ করতে শেখেন, কোন প্রশ্ন করতে নয়। কারণ তাদের বাবারাও তো তাদের কাছে সুপারম্যান। বাবা যেভাবে পারেন সেভাবেই টাকা আয় করেন সন্তানকে সুখের সাগরে ডুবিয়ে রাখার জন্য। এই সুখ যে কতটা ‘অ-সুখ’ কতটা ক্ষতিকর তা বোঝার ক্ষমতাও সেই বাবা ও তার সন্তানদের থাকে না। এইসব দুর্নীতিপরায়ণ মানুষের ছেলেমেয়েই একদিন বিদেশে পড়তে যায়, সেখানে বাড়ি-গাড়ি কিনে বসবাস করতে শুরু করেন। আর বউরা আরাম-আয়েশে বেগমপাড়ার মতো জায়গায় থাকতে শুরু করেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us