প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে আলোচনা ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, তার প্রতিপাদ্য ছিল ভবিষ্যতের জন্য ভারত-বাংলাদেশ অভিন্ন রূপকল্প: অভিন্ন সমৃদ্ধির লক্ষ্যে কানেকটিভিটি, বাণিজ্য ও সহযোগিতা জোরদার করা।
পুরো আলোচনা ও সমঝোতাগুলো বিশ্লেষণ করলে মনে হতে পারে, বড় লক্ষ্যের কাছে ছোট সমস্যাগুলো উপেক্ষিত হয়েছে। এ সফরের সারাংশ করলে মনে হবে, এই রূপকল্পে একটা অদৃশ্য পক্ষকে সামনে রেখেই বাংলাদেশ-ভারত তাদের সহযোগিতা কাঠামোকে দাঁড় করাচ্ছে। যদিও বলা হচ্ছে যে ভারত-বাংলাদেশের স্বার্থে দুই পক্ষ মিলেই তারা এটি করার চেষ্টা করছে।
এই রূপকল্পে ডিজিটাল ও গ্রিন অংশীদারত্ব এবং ইন্দো প্যাসিফিক নীতির মতো অনেক বড় বড় বিষয় এসেছে এবং এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের অংশীদার হবে ও তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেবে। যেমন বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের গেদে থেকে হাসিমারা পর্যন্ত দেশটির উত্তর–পূর্ব অঞ্চলে মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। এর মধ্য দিয়ে উত্তর–পূর্ব রাজ্যগুলোর সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ আরও বাড়বে, আরও শক্তিশালী হবে।
কিন্তু এখন তা কীভাবে পরিচালনা করা হবে, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যখন মালগাড়ি যাবে তখন এর ভেতরে কী থাকবে না থাকবে, তা বাংলাদেশের জানার অধিকার থাকবে কি না—এ বিষয়গুলো স্পষ্ট নয়। হয়তো পরে সেসব নিয়ে আলোচনা হবে।
এতে ভারত কৌশলগতভাবে লাভবান হবে। কারণ, তারা চিকেন নেক বাইপাস করে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে উত্তর–পূর্ব রাজ্যগুলোতে যেতে পারবে, মালামাল আনা–নেওয়া করতে পারবে। এখন এ নিয়ে বাংলাদেশের জনমনে যে প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তা খুবই স্বাভাবিক। কারণ ১৫ বছর ধরে কানেকটিভিটি নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে, যার সবচেয়ে সুফলভোগী হয়েছে ভারত। কিন্তু আমরাও তো সুফলভোগী হতে চাই।
২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণায় মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ভারতকে ব্যবহার করতে দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল মুক্ত আঞ্চলিক পরিসর তৈরি করা। তার মানে শুধু ভারত নয়; নেপাল, ভুটানসহ সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সবার যোগাযোগ তৈরি হবে। কিন্তু নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে কি আমরা যথেষ্ট পরিমাণ যোগাযোগ করতে পেরেছি? সেটি হচ্ছে না বলে মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করছে।