বেনজীরকে নিয়ে আরও কিছু কথা

যুগান্তর ড. মাহবুব উল্লাহ প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২৪, ১২:২১

গত ১৩ জুন একটি দৈনিক পত্রিকা শিরোনাম করেছে, ‘সম্পদের খনি বেনজীর।’ এ পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী, পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ যেন সম্পদের ‘খনি’। প্রতিদিনই কোনো না কোনো মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশনে আসছে বেনজীর ও তার পরিবারের অর্থ-সম্পদের তথ্য। সাবরেজিস্ট্রি অফিস ও ভূমি অফিস ছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকেই স্বপ্রণোদিত হয়ে দুদকে এসে তথ্য দিচ্ছেন। আবার অনেকেই দুদকের হটলাইনে ফোন করেও তথ্য দিচ্ছেন। দুদক কর্মকর্তারা এসব তথ্যের দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহ করে সেগুলো ক্রোক ও ফ্রিজের আদেশ পেতে আদালতে আবেদন করছেন। এমন অবস্থায় উপযুক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ১২ জুন তৃতীয় দফায় বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ ফ্রিজ ও ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন। এর আগে গত ২৩ ও ২৬ মে, ২০২টি দলিলে থাকা ৪টি ফ্ল্যাট ও ৬২১ বিঘা জমি ক্রোক এবং বিও অ্যাকাউন্টসহ ৩৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার নির্দেশ দেন আদালত। গত ১২ জুন ক্রোক ও ফ্রিজ আদেশ দেওয়া সম্পদগুলোর মধ্যে রয়েছে উত্তরায় ৩ কাঠার প্লট, মোহাম্মদপুরের আদাবরে পিসি কালচার সোসাইটিতে বেনজীরের ৬টি ফ্ল্যাট (স্ত্রী জিসান মির্জার নামে), বাড্ডায় ২টি ফ্ল্যাট, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ২৪ কাঠার প্লট, বান্দরবানে ২৫ একর জমি, সিটিজেন টিভির মালিকানা ও টাইগার অ্যাপারেল কোম্পানির (বায়িং হাউজ) শেয়ার মালিকানা।


এ নিয়ে ৩ দফায় বেনজীরের বিত্ত-সম্পদের ফিরিস্তি প্রকাশ হলো। সময় গড়ালে আরও কত ধরনের সম্পদের খবর প্রকাশ হবে, তা সৃষ্টিকর্তাই জানেন। বেনজীর দেশের সুনির্দিষ্ট স্থানে জমিজমা সংগ্রহ করে ক্ষান্ত হননি। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তার সম্পদের তথ্য উদ্ঘাটিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষই এসব তথ্য উদ্ঘাটনে সহায়তা করছে। বেনজীর-কাণ্ড যতদিন ধরা পড়েনি, ততদিন লোকজন কিছু বলেনি। কারণ, এ রকম একজন শক্তিধর মানুষের বেশুমার সহায়-সম্পত্তি অর্জনের খবর প্রকাশ করে তারা ঝামেলায় পড়তে চাননি। যে মুহূর্তে মিডিয়া সাহস করে পুরো বিষয়টি তুলে ধরতে শুরু করল, তখন থেকেই সরকারের টনক নড়ল, দুদক সক্রিয় হলো। মানুষজনও আগ বাড়িয়ে তথ্য দিতে শুরু করল। যারা তথ্য দিচ্ছেন তারা সাহসী হয়েছেন দুদকের সক্রিয়তা দেখে। দুদক রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের তরফে, এ প্রতিষ্ঠানটি সক্রিয় হওয়ার পর সাধারণ মানুষ ভয়-ডরকে দূরে ঠেলে ফেলে বেনজীর সংক্রান্ত তথ্যাবলি যথাস্থানে তুলে ধরতে শুরু করল। দেখা গেল, রাষ্ট্র যদি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তাহলে সাধারণ মানুষও অন্যায়গুলো খুঁজে বের করতে এবং সেগুলো জনগণের গোচরে আনতে ভয় পায় না। দেশের প্রতিটি স্তরে সীমাহীন দুর্নীতি রয়েছে। অথচ এগুলো জনসমক্ষে কদাচিৎই প্রকাশ পায়। রাষ্ট্র একটু উদ্যোগী হলে দুর্নীতির তথ্য চাপা থাকে না, বেনজীর-কাণ্ডকে কেন্দ্র করে আমরা সেটাই লক্ষ্য করলাম। কথায় বলে বিপদ যখন আসে, তখন সবদিক থেকেই বিপদ হানা দেয়। বেনজীর তার ব্যতিক্রম নন।


বেনজীর সম্পর্কে একটি ভিন্ন মাত্রার খবর বেরিয়েছে ১৪ জুন শুক্রবারের একটি দৈনিকে। খবরটি দৈনিকের প্রথম পাতায় দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হিসাবে ছাপা হয়েছে। এ সংবাদের শিরোনাম ছিল: ভর্তির যোগ্যতাই ছিল না, তবুও ডক্টরেট ডিগ্রি পান বেনজীর। এ সংবাদ থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেনজীর আহমেদ ডক্টরেট ডিগ্রি নেন। এরপর থেকে তিনি নামের আগে ডক্টর শব্দটি ব্যবহার করা শুরু করেন। উল্লেখ করার মত বিষয় হলো, গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, অনেক সামরিক ও বেসামরিক আমলা তাদের নামের সঙ্গে ডক্টর উপাধি ব্যবহার করেন। তারা রাষ্ট্রের যেসব দায়িত্ব পালন করেন, তার জন্য গবেষণাভিত্তিক ডক্টরেট ডিগ্রির প্রয়োজন নেই, তবুও তারা একটি ডক্টরেট ডিগ্রি জোগাড় করার জন্য উন্মুখ হয়ে পড়েন। এরা কী বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি করেছেন এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় কোর্স রিকোয়ারমেন্ট ও রেসিডেন্সি রিকোয়ারমেন্টের শর্ত পূরণ করেছেন কিনা, জানা যায় না। সর্বোপরি ডক্টরেট ডিগ্রি করার সময় তারা শিক্ষা ছুটিতে ছিলেন কিনা এবং ন্যূনতম সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কিনা, সে সম্পর্কে সামান্যই জানা যায়। যে কোনো ব্যক্তি উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করলে তা দেশের মানবসম্পদকে সমৃদ্ধ করে। সেদিক থেকে সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের ডক্টরেট ডিগ্রি করার হিড়িক দেখে অখুশি হওয়ার কিছু নেই। তারা যদি সত্যিকারের শ্রম ও সাধনা দিয়ে ডিগ্রি অর্জন করে থাকেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। পাকিস্তান আমলে মেধাবী ছাত্ররা সিএসএস পরীক্ষা দিয়ে সিএসপি অফিসার হতো। এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন ডাকসাইটে আমলা। তবে তাদের জ্ঞানগণ্ডি কম ছিল না। পাকিস্তান আমলে এসব অফিসারদের দু’একজন বাদে কেউ ডক্টরেট ডিগ্রি করার প্রয়োজন বোধ করেননি। তবে বাংলাদেশোত্তরকালে যেসব তরুণ সিএসপি অফিসার সরকারি দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন, তাদের মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক অফিসার ডক্টরেট ডিগ্রি করেছেন। তারা এ ডিগ্রি অর্জন করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তাদের ডিগ্রির ওজন ও মূল্য নিয়ে কখনোই প্রশ্ন ওঠেনি। তাদের উচ্চতর ডিগ্রি থাকায় দেশ লাভবান হয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us