রোগতাত্ত্বিক ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সামনে বিপদটা কত বড় তার স্পস্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন দেশি-বিদেশি ২২ জন স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী। তাঁদের সঙ্গে আছেন আরও কয়েকজন গবেষক। তাঁরা বলছেন, অসংক্রামক রোগ দেশে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করার মতো জরুরি পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
এই ২২ জন শিক্ষার্থী কানাডার ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাচারাল রিসোর্স ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের। তাঁরা ‘রিডিউসিং ডায়েটারি রিলেটেড রিস্ক অ্যাসোসিয়েটেড উইথ নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস ইন বাংলাদেশ’ নামের প্রকল্পের আওতায় ১৬টি পৃথক গবেষণা করেছেন। প্রবন্ধ লেখার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা যুক্ত ছিলেন।
এ প্রকল্পে অর্থায়ন করেছিল কানাডার ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছিল ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে। গবেষণা প্রবন্ধগুলো একত্র করে বই আকারে প্রকাশ করেছে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড। ৪১৮ পৃষ্ঠার বইটির নাম রেড অ্যালার্ট! নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস, ডায়েটারি হ্যাবিটস অ্যান্ড লাইফস্টাইল ইন বাংলাদেশ।
গবেষণা প্রকল্পে শহর, শহরতলি, উপজেলা সদর ও গ্রামের ২১ হাজার মানুষের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে মূলত জোর দেওয়া হয় অসংক্রামক রোগ, খাদ্যাভ্যাস, কায়িক শ্রম এবং জীবনযাপন–সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে। বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস মারাত্মকভাবে বেড়েছে। একই সঙ্গে মানুষের মধ্যে বেড়েছে অতি ওজন ও স্থূলতার প্রবণতা। শহরের ২১ শতাংশ মানুষের ডায়াবেটিস আছে, ২৪ শতাংশের আছে উচ্চ রক্তচাপ। আর ৫৫ শতাংশের ওজন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি। প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রবণতা বা ঝোঁক বাড়তির দিকে। এ জন্যই ‘রেড অ্যালার্ট’।
খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন পদ্ধতি, খাদ্যাভ্যাসের নির্ধারক বা চালিকা শক্তি, খাদ্যবৈচিত্র্য, জেন্ডার ও পারিবারিক স্বাস্থ্য, শাকসবজি উৎপাদনে ও পরিবারের জন্য খাদ্য নির্বাচনে নারীর ভূমিকা, একটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচার নিয়ে এসব গবেষণা হয়েছে। প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে অসংক্রামক রোগের সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেছেন গবেষকেরা। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা ও অতি ওজনের সম্পর্ক তাঁরা নির্ণয় করেছেন। দেখতে চেয়েছেন অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিগুলো কী কী এবং কীভাবে সেই ঝুঁকি বাড়ছে। স্বাস্থ্যের একটি নির্দিষ্ট সমস্যা নিয়ে এতগুলো প্রবন্ধ দুই মলাটের মধ্যে সাধারণত দেখা যায় না। প্রতিটি প্রবন্ধেই বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট বর্ণনা করার চেষ্টা করা হয়েছে।