ষাটের দশকের শেষ দিকের কবি অসীম সাহা (২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯ - ১৮ জুন ২০২৪) দীর্ঘ রোগভোগের পর চলেই গেলেন। স্বাধীনতার অব্যবহিত আগের দশকে মাদারীপুরে থাকতেই তিনি কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তার পিতা ছিলেন নাজিমউদ্দিন কলেজের (অধুনা মাদারীপুর সরকারি কলেজ) অধ্যক্ষ, ‘সাংখ্য দর্শন ও ন্যায় দর্শন’ গ্রন্থের প্রণেতা, প্রখ্যাত দার্শনিক অখিলবন্ধু সাহা।
লেখক পিতার সান্নিধ্যে তিনি সাহিত্যে পদার্পণ করেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করার পরে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে শরণার্থী শিবিরের দায়িত্ব পালন করেন।
স্বাধীনতার দীর্ঘ অপেক্ষার পরে ‘পূর্ব-পৃথিবীর অস্থির জ্যোৎস্নায় (১৯৮২)’ লিখে কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। একে একে প্রকাশিত হয়, ‘কালো পালকের নিচে (১৯৮৬)’, ‘পুনরুদ্ধার (১৯৯২)’, ‘উদ্বাস্তু (১৯৯৪)’, ‘মধ্যরাতের প্রতিধ্বনি (২০০১)’, ‘অন্ধকারে মৃত্যুর উৎসব (২০০৬)’, ‘মুহূর্তের কবিতা (২০০৬)’, ‘সৌর-রামায়ণ (২০১১)’, ‘কবর খুঁড়ছে ইমাম (২০১১)’, ‘পুরনো দিনের ঘাসফুল (২০১২)’ প্রভৃতি কবিতাগ্রন্থ।
ছড়া, গান, প্রবন্ধ, উপন্যাস, গল্প ও অনুবাদেও তিনি ভূমিকা রেখেছেন। শেষের দিকে ব্যাকরণ ও অভিধান প্রণয়নেও আত্মনিয়োগ করেছিলেন। একজন পূর্ণাঙ্গ সাহিত্যিক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাংবাদিকতা ছেড়ে তিনি ‘ইত্যাদি প্রিন্টার্স’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এক মেয়াদে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘আলাওল সাহিত্য পুরস্কার’, ‘আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার’, ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’, ‘একুশে পদক’ প্রভৃতি সম্মাননায় ভূষিত হন।
ষাটের দশকের উন্মাতাল অস্থির সময়কে তিনি কবিতায় তুলে এনেছেন। তখন পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও গ্রন্থভুক্তি হয়েছে অনেক পরে। তিনি এই পূর্ববঙ্গকে পূর্ব-উপকূল বলে অভিহিত করে এর বিরহকাতর রূপ অঙ্কন করেছেন—
‘ধুলোবালি মাখা, রুক্ষ, এলোমেলো কয়েকগুচ্ছ চুল
ছড়িয়ে ছিটিয়ে সে বসে আছে বিরহকাতর
এই পূর্ব-উপকূলে।
তাকে দেখে মনে হয়, স্বপ্ন-প্রাসাদ থেকে
ভিখারিনী বেশে মীরা এসেছে এখানে।’
(বিরহকাতর এক দগ্ধ বাউলিনী; ‘পূর্ব-পৃথিবীর অস্থির জ্যোৎস্নায়’)