‘জিঞ্জিরা’ যখন ‘সেন্টমার্টিন’ তখন উদ্বেগ সংগত

সমকাল প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২৪, ১৩:৫৪

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমুদ্র সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত ‘সেন্টমার্টিন’ বা নারিকেল জিঞ্জিরা নিয়ে গত এক বছরে রাজনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক নানা আলোচনার মধ্যেই দ্বীপটি হঠাৎ করেই সামরিক মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, দ্বীপটির ‘নিরাপত্তা’ নিয়ে যে শঙ্কা সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে ধূমায়িত হয়ে উঠছে, সেটা নিয়ে আমরা কতটা চিন্তিত হব?


আমরা জানি, ঐতিহাসিকভাবেই সেন্টমার্টিন বা ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভৌগোলিকভাবেও দ্বীপটি একসময় বঙ্গীয় বদ্বীপের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল; প্রাকৃতিক দুর্যোগে টেকনাফ উপদ্বীপের সঙ্গে সংযোগকারী স্থলভাগ ডুবে গেলে বিচ্ছিন্ন দক্ষিণ অংশটি দ্বীপে পরিণত হয়। নারিকেল জিঞ্জিরায় গিয়ে প্রথম বসতি স্থাপন করেছে বঙ্গীয় উপসাগরের উপকূলীয় জনগোষ্ঠীই, অন্য কেউ নয়।


বস্তুত সুলতানি ও মোগল শাসনামলে আরবি-ফারসি ভাষার প্রভাবে এই বঙ্গে পানিবেষ্টিত ভূখণ্ড মানেই ‘জিঞ্জিরা’। কারণ, দ্বীপের আরবি প্রতিশব্দ ‘জাজিরা’। যে কারণে ঢাকার পাশে, বুড়িগঙ্গা-ধলেশ্বরীবেষ্টিত কেরানীগঞ্জেরও মোগল নাম ‘জিঞ্জিরা’। ব্রিটিশ শাসনামলে চট্টগ্রামের জনৈক ডেপুটি কালেকটরের নামানুসারে আমাদের ‘জিঞ্জিরা’ পশ্চিমা ‘সেন্টমার্টিন’ হওয়ার আগ পর্যন্ত এর ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক শেকড় নিয়ে বিতর্ক ছিল না।  


যা হোক, গত ৫ জুন টেকনাফ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন থেকে সরকারি কর্মকর্তারা নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে ফেরার সময় তাদের নৌযান লক্ষ্য করে গুলির ঘটনা ঘটে। ৮ জুন টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে আবার গুলির মুখে পড়ে একটি মালবাহী ট্রলার। ১১ জুন রোগীবাহী একটি স্পিডবোটও এলোপাতাড়ি গুলির মুখে পড়ে। এ নিয়ে শোরগোলের মুখেই  কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি এক রোহিঙ্গা তরুণ দাবি করেন, ১৩ জুন সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলারে করে ফেরার পথে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।


প্রশ্ন হচ্ছে, কারা এসব গুলি করছে? সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা কেউ কেউ বলছেন, মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীই দায়ী (বিবিসি বাংলা, ১৩ জুন ২০২৪)। সন্দেহের সুবিধা দিয়ে কেউ কেউ বলছেন, আরাকান আর্মিও গুলি করতে পারে। কারণ সেন্টমার্টিনের বিপরীত পাশের উপকূলীয় মংডু এলাকা এখন এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দখলে। সেখানে কয়েক মাস ধরে তুমুল লড়াই চলছে। বাংলাদেশি নৌযানগুলো দেখে তারা ‘ভীত হয়ে’ গুলি চালাতেও পারে। অর্থাৎ, যুযুধান উভয় পক্ষই টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে চলাচলকারী নৌযানগুলোকে শত্রুপক্ষ ভেবে গুলি চালাতে পারে।


এটাও ঠিক, এবারই প্রথম ওই এলাকায় এমন গোলাগুলি হচ্ছে না। ১৯৯৮ সালের অক্টোবরেও মিয়ানমার নেভির গুলিতে পাঁচ বাংলাদেশি জেলে প্রাণ হারিয়েছিলেন। এক বছর না ঘুরতেই ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে একইভাবে এক বাংলাদেশি জেলে নিহত হয়েছিলেন। এভাবে ২০০০ সালে চারজন, ২০১১ সালে চারজন জেলে সেন্টমার্টিনের জলসীমায় নিহত হয়েছিলেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বা দুষ্কৃতকারীর গুলিতে।


সেন্টমার্টিনের ‘মালিকানা’ নিয়ে মিয়ানমারের দিক থেকে উস্কানিও নতুন নয়। সমুদ্রসীমা নিয়ে ১৯৭৪ সালে যদিও দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা হয়েছিল; যদিও শেষ পর্যন্ত ২০১২ সালের মার্চ মাসে জাতিসংঘ ট্রাইব্যুনালে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে এবং সেন্টমার্টিন ও সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ ঘোষিত হয়েছে; মিয়ানমার এখনও উস্কানি দিতে চায়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের অক্টোবরে দুটি সরকারি ওয়েবসাইটে সেন্টমার্টিনকে দেশটির অংশ হিসেবে দেখানো হয়। বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমারের ঢাকায় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বাংলাদেশের পক্ষে কড়া প্রতিবাদ জানানোর পর ওয়েবসাইটের তথ্য সংশোধন করা হয়েছিল।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us