‘হারিয়ে ধন বাপে-পুতে কীর্তন’ বলে একটা কথা বৃহত্তর ময়মনসিংহে চালু আছে। ‘কালোটাকার’ ওপর আলোচনা দেখে-শুনে এবং পড়ে এ কথাটা মনে পড়ছে। কালোটাকা প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে, তা পাচার হচ্ছে এবং হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে আমাদের। রাষ্ট্রের হিসাবে তা নেই। হারিয়ে যাচ্ছে খাতা থেকে। এসব দেখে-শুনে আমরা সবাই এখন বিলাপ করছি। বলছি, কালোটাকা ধরতে হবে, কালোটাকার মালিকদের বিচার করতে হবে। ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার করতে হবে। বিদেশে যারা টাকা পাচার করেছে, তাদের তালিকা করতে হবে। ওইসব টাকা দেশে ফেরত আনতে হবে। এসব দাবির প্রেক্ষাপট কী? প্রেক্ষাপট কালোটাকার বাড়বাড়ন্ত। দিন দিন তা স্ফীত হচ্ছে। একজন সরকারি কর্মকর্তাও হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক! সরকার এবার তাই কালোটাকা ধরার জন্য ‘আধার’ দিয়েছে, যেমন-মানুষ মাছ ধরতে ‘আধার’ দেয়। ২০২৪-২৫-এর বাজেটে কালোটাকা ‘সাদা’ করার ব্যবস্থা আছে। ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করা যাবে। এতে কেউ কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। এতেই হয়েছে বিপত্তি, সবাই বলছে এটা অবিচার।
সাধারণ একজন করদাতা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর দেয় সরকারকে। সেখানে মাত্র ১৫ শতাংশ দিয়ে কালোটাকা সাদা করা হবে-এটা অন্যায়/অবিচার। এতে ভালো করদাতারা কর দিতে নিরুৎসাহিত হবে। এ যুক্তির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা কঠিন। সত্যিই তো, এটা কী করে হয়? শুধু তাই নয়, জনমত আরও কঠিন। কালোটাকার মালিকদের বিচার করতে হবে। এদের মধ্যে যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছে, তাদের শাস্তি দিতে হবে। বলা বাহুল্য, এসব দাবি সবসময়ই করা হয়েছে/হচ্ছে। এ পর্যন্ত বহুবার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবারই এসব দাবি করা হয়েছে। মনে রাখা দরকার, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ স্বাধীনতা-উত্তরকালে সব সরকারই দিয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো ব্যতিক্রম নেই। কিন্তু ফলাফল আশাপ্রদ নয়।