শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়তে গিয়ে যে শিক্ষা পেলাম

সমকাল হোসেন আবদুল মান্নান প্রকাশিত: ১৩ জুন ২০২৪, ১২:০৩

ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রবেশপথে উৎকীর্ণ একটি বাক্য যে কোনো বয়সের পাঠকের চিত্ত এবং চিন্তাকে প্রভাবিত করতে পারে– ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’। আপাতদৃষ্টিতে সহজ সরল বাক্য। কিন্তু এর মধ্যে লুকিয়ে আছে জীবনের গভীরতর তাৎপর্য। 


স্বপ্ন দেখা যতটা সহজ, বাস্তবায়ন ততটা নয়। আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল গ্রামে একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করার। কারণ গ্রামের অভাব ও অপরিমেয় কষ্ট নিজ চোখে দেখেছি। বুঝেছি, কেবল শিক্ষাই তাদের অগ্রসরমান করতে পারে, যা অন্য কিছুতে সম্ভব নয়। সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় আমার আর্থসামাজিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সেই পরিকল্পনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল– একটি মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে শুরু করা যায়? মেয়েদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাকি উচ্চ বিদ্যালয়? শুরুতে এসব নিয়ে অনেক ভেবেছি। অবশেষে গ্রামের মেয়েদের জন্য একটি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিই। প্রতিষ্ঠানটির নাম নিয়েও কম ভাবিনি। নিজের নামে, নাকি করোনাকালে প্রয়াত স্ত্রীর নামে? শেষ পর্যন্ত আমার দুঃখিনী মায়ের নামে কলেজটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিই: আয়েশা-ছিদ্দিক মহিলা কলেজ।


আমার মা গ্রামের আটপৌরে বনেদি মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া আর দশটা কন্যাশিশুর মতোই জন্ম নিয়েছিলেন। কিন্তু খুব অল্প বয়সে তিনি তাঁর মাকে হারান। দেশভাগ, দাঙ্গা, দুর্ভিক্ষ, রক্তপাত ইত্যাদি আমার বড় ব্যবসায়ী নানাকে কলকাতা শহর থেকে এক প্রকার তাড়িয়েই দিয়েছিল। দেশে ফিরে এসে যখন অতীত আভিজাত্যকে আঁকড়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই আমার মা আরও ছোট-বড় বেশ কয়েকজন ভাইবোনসহ মাতৃহারা হন। 


কিছু দিন পর নানার দ্বিতীয় সংসার হলো। আমার মা তাঁর সৎমায়ের আদরে-অনাদরে বেড়ে ওঠেন। লেখাপড়া বলতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি অতিক্রম করেছিলেন। মাত্র ১৩/১৪ বছর বয়সে আমার বাবার জীবনে প্রবেশ করেন। আইনের চোখে শিশু আমার মা আমাদের সম্পূর্ণ কৃষিনির্ভর সংসারে এসে পুরো বোঝাটা নিজের মাথায় তুলে নিলেন। দীর্ঘ প্রায় ৪৫ বছর আমার শিক্ষিত তবে রাগী ও মেজাজি বাবার সঙ্গে ঘর-সংসার করেছিলেন। আমাদের মা ৮ সন্তানের জন্মদাত্রী। শৈশব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অনেকটা পরাধীনতার ভেতর দিয়েই ২০০১ সালের ২৫ আগস্ট যাপিত জীবনের পরিসমাপ্তি টানেন। আমার পরমতসহিষ্ণু, সর্বংসহা, অসাধারণ ধার্মিক মা অনন্তলোকে শান্তিতে থাকুন। 


গ্রামের পিছিয়ে পড়া মেধাবী মেয়েদের জন্য একটা কলেজ করার পেছনে সবচেয়ে বেশি প্রেরণা জুগিয়েছে বাঙালির নারীশিক্ষা সংগ্রামের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার বিখ্যাত উক্তি– ‘কন্যাগুলিকে শিক্ষিত করিয়া ছাড়িয়া দিন। এরা নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই গড়িয়া তুলিবে। কাহারো মুখাপেক্ষী হইয়া পড়িয়া থাকিবে না।’ 


বাংলাদেশের বিদ্যমান আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটেও নারীর অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা আমাদের সামনে জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। কিন্তু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়তে গিয়ে যে শিক্ষা পেয়েছি, সেটিও কম দৃষ্টান্তমূলক নয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us