এত বিকল্পে প্রাণ বিকল হওয়ার জোগাড়

আজকের পত্রিকা বিধান রিবেরু প্রকাশিত: ১২ জুন ২০২৪, ১২:৩৩

আমরা এখন বাস করছি প্রাচুর্যের যুগে। চারদিকে জীবনের এত আয়োজন যে আমাদের মন বিগলিত হয়, চোখ ধাঁধিয়ে যায়। নৈর্ব্যক্তিক বৈশিষ্ট্যের সম্প্রসারণ এমন মাত্রায় ঘটেছে, যাতে আপাতদৃষ্টে মনে হয় বেশ ভালোই হলো। কিন্তু আখেরে আমার মনে হয় ক্ষতিটা যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। খেয়াল করে দেখুন, রেস্তোরাঁয় ‘আ লা কাখ্ত’ ভালো, না ‘বুফে’? খাবারের তালিকা দেখে ফরমাশ দেওয়ার চেয়ে অনেকেই ইদানীং সামনে সাজিয়ে রাখা অর্ধশতাধিক খাবারের থালা থেকে মনের পছন্দ অনুযায়ী খাবার বেছে নিতে চান। এতে হয় কী, এক ক্যুইজিনের সঙ্গে আরেক ক্যুইজিনের রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়ে যায়। থাই, চীনা, মোগলাই ও বাঙালি খাবারের রন্ধনপ্রণালি এক নয়, তাই এদের রসায়নটাও ভিন্ন। কিন্তু কেউ যদি একই সময়ে তিন-চার রন্ধনপ্রণালির একাধিক খাবার পেটে চালান করে দেন, তাহলে বদহজম হওয়ার শঙ্কা বেড়ে যায়। একই ব্যাপার ঘটতে পারে দৃশ্যমাধ্যমের ক্ষেত্রেও। 


আগে একটি মাত্র টেলিভিশন ছিল, সেটার মধ্যেই বিচিত্র অনুষ্ঠান। এখন বিচিত্র টিভি চ্যানেলে নানানমাত্রিক অনুষ্ঠান চলে। ঘরের বৈঠকখানায় বসে আমরা একের পর এক চ্যানেল পাল্টাতে থাকি। স্থির হতে পারি না কোথাও। একই ঘটনা ঘটেছে চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও। সিঙ্গেল স্ক্রিন বিদায়, এসেছে মাল্টিস্ক্রিন। সিনেপ্লেক্সে অনেক সিনেমা চলে, বেছে নিতে হয় তার মধ্য থেকে একটি। এটি যেন সিনেমার বুফে। আর চাহিদা ও চাঁদাভিত্তিক ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্ল্যাটফর্মের কথা তো বলাই বাহুল্য। সেখানে কোন সিরিজ বা সিনেমা দেখবেন, তা ঠিক করতে করতেই আধঘণ্টা চলে যায়। এই প্রাচুর্য আমাদের অস্থির করে তুলেছে তো বটেই, স্থিরতাকেও নষ্ট করেছে। অনেকেই এই বাছাই করতে করতে দেখা যায় ক্লান্ত হয়ে হারিয়ে ফেলে সিনেমা বা সিরিজ দেখার আগ্রহ। আসলে এত বিকল্প আমাদের সামনে, আমরা সেসব নিয়ে প্রায়ই ধন্দে পড়ে যাই। গোলকধাঁধার ভেতরে ঘুরতে ঘুরতে শেষমেশ দেখা যায় আর কিছুই দেখা হলো না, ছুটির দিনের বিকেলটাই পণ্ড! 


প্রশ্ন হলো, এত প্রাচুর্য বা বিকল্প কি আমাদের দরকার? কী করব এত এত সিনেমা ও সিরিজ দিয়ে? সেসব যদি আবার হয় অধিকাংশই ছক বা কাঠামো ধরে বানানো? হরর ছবির কাটতি বেশি, তো দেখা যায় বিভিন্ন ওটিটিতে আপ হয়ে যাচ্ছে দুনিয়ার হরেক রকমের হরর ছবি। মারামারি-কাটাকাটি মানুষ দেখে, তো ওটিটি নিজেই প্রযোজনা করে বানিয়ে নিচ্ছে অ্যাকশন ও ভায়োলেন্সে ভরপুর সিনেমা ও সিরিজ। আর যৌনতার কথা আলাদা করে কী আর বলব! ১৮ প্লাস কনটেন্টের চাহিদা সব সময়ই থাকে শীর্ষে। এসব ভিড়ের চাপে চিড়েচ্যাপটা হওয়ার জোগাড় হয় ভালো চলচ্চিত্র ও ধারাবাহিকের। মুখে মুখে যদি কিছু ভালো কনটেন্টের কথা ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে মানুষ সেটি দেখে। নয়তো নিজে থেকে কনটেন্ট ঘেঁটে দেখা এবং দেখার পর ভালোমন্দ রায় দেওয়া দর্শকের সংখ্যা খুবই কম। ওটিটির অধিকাংশ দর্শকই দেখা যায় টিভি দেখতে দেখতে বিরক্ত, যাঁদের সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখার ফুরসত নেই, তাঁরা নিজের মোবাইল ফোনে ওটিটির অ্যাপটি খুলে বসেন। আর অনেকেই হয়তো বৈঠকখানার টিভিতে ওটিটির সঙ্গে সংযুক্ত হন। এই সংখ্যাও খুব কম। কারণ ওটিটি আর যৌথভাবে চলচ্চিত্র দেখার চর্চার ভেতরে নেই। এই প্ল্যাটফর্মের অধিকাংশ কনটেন্টই ওই চিপসের বিজ্ঞাপনের মতো: ‘একা একা খেতে চাও? দরজা বন্ধ করে খাও।’ অর্থাৎ যৌথতার চর্চা শেষ! 


প্রেক্ষাগৃহে গেলে এক তো যৌথভাবে ছবিটি দেখা হয়; সেটার ভালো দিক আছে, খারাপ দিকও আছে। ভালো দিকটি হলো: প্রেক্ষাগৃহে আপনি কিছুক্ষণ পরপর ‘পজ’ বাটন চেপে কনটেন্ট বন্ধ করে এটা-সেটা করতে পারেন না। আপনাকে অখণ্ড মনোযোগ দিয়েই ছবিটি দেখতে হয় এবং একটানা দেখতে হয়। ছবি দেখার সময় অন্য কেউ এসে আপনাকে বিরক্ত করবে না। আপনি একমনে ছবি দেখতে পারবেন। তবে প্রেক্ষাগৃহেও আজকাল অখণ্ড মনোযোগ দিয়ে ছবি দেখা লোকের সংখ্যা কমছে। আপনি হয়তো গেলেন খুব গভীর মনোসংযোগ নিয়ে ছবিটি দেখতে। দেখবেন আপনার সামনের সারিতে বসা একাধিকজন, ছবির ক্লাইমেক্সের ভেতরেই ফেসবুক বের করে স্ক্রল করছে, চ্যাটিং করছে। স্ক্রিনের তীব্র আলো আপনার চোখে এসে হুল ফোটাচ্ছে। আর ফোনের রিংটোন বাজা এবং জোরে কথা বলা তো আছেই। সময় যেহেতু পাল্টে গেছে, তাই আগের সেই যৌথতা চর্চার বিষয়টিও এক জায়গায় আটকে নেই। মাঝে মাঝে তাই প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখতে গেলে অন্যরা উল্টো বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে চলচ্চিত্র যদি আপনার ধ্যানজ্ঞানের বিষয় হয়, তাহলে বড় পর্দায় চলচ্চিত্র দেখার আসলে কোনো বিকল্প নেই। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us