দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জরুরি অবস্থা’ বুমেরাং হলো?

সমকাল ফারুক ওয়াসিফ প্রকাশিত: ১২ জুন ২০২৪, ০৮:২৯

মধ্যযুগীয় কবিতাখানিই যেন সত্য হলো: সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু অনলে পুড়িয়া গেল। অমিয় সাগরে সিনান করিতে সকলি গরল ভেল। দুর্নীতি তো কমলোই না, বরং আগে যেটুকু রাখঢাক ছিল, এখন তাও নাই। দুর্নীতির মহারাজ-যুবরাজরা আগে সামনে কম আসতেন, এখন সড়ক-মহাসড়কের মাঝখান দিয়ে ভেঁপু বাজিয়ে চলাফেরা করেন। হাঁটাপথের সৎ মানুষেরা ভয়ে একপাশে সরে দাঁড়ান। 


দুর্নীতিবিরোধী জরুরি অবস্থার ১৭ বছর পরে এই হলো অবস্থা। দুর্নীতির খোলসছাড়া এই রূপ দেখে ২০০৭ সালের আগের দুর্নীতিবাজরাও লজ্জা পেয়ে যাবে। জরুরি অবস্থা জারি হলো। সুখের লাগিয়া ‘দুর্নীতিমুক্ত স্বদেশ’ এবার হবেই হবে; বলা হলো। বিরাট তোড়জোড়, ধুন্ধুমার অভিযান চলল– অনেকের মধ্যে আশার লতা লকলকিয়ে বেড়ে উঠল। সে সময়ই একদল তরুণ বিদেশের পাট চুকিয়ে দেশে ফিরলেন। তারা দেশের কাজ করবেন। পরে দেখা গেল, সকলই গরল ভেল। কেউ কেউ দুর্নীতির পাকেচক্রে মিশে বড় পদ আদায় করে নিলেন, অন্যরা মানে মানে বিদায় নিলেন প্রবাসে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান রাজনৈতিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পর্যবসিত হলো। এর কর্ণধারেরা আগের চেয়ে খারাপ অবস্থায় রেখে গেলেন দেশটাকে। তারপর যারা এলেন, তারা প্রায় সব ব্যাপারে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেললেন।
জরুরি অবস্থার সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের আলোচিত চরিত্র ছিল দুদক। বাঘের মতো সে কী তর্জন-গর্জন দুদকের কর্মকর্তাদের! দেখে মনে পড়ে যাচ্ছিল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিশোর গল্পের একটি লাইন: সবাই অবাক, সবাই ভাবে, ব্যাপারখানা কি? ভয়কাতুরে মাহবুব (দুদক) আজ এমন সাহসী! মানিকের ওই মাহবুব সামান্য কর্মজীবী বালক। কিন্তু ঝড়ের মুখে সে-ই হয়ে উঠেছিল দারুণ সাহসী। বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমলে দুদক ছিল যাত্রাপালার বিবেকের মতো এক অকেজো মানুষ। সে ভালো কথা বলে বটে, কিন্তু তার কথায় কেউ ভয় পায় না, গা করে না। সব আগের মতোই চলতে থাকে। সেই চিরপরিচিত বিবেকের ভূমিকা থেকে দুদক হাজির হলো দুর্নীতিকে দুরমুশ করার ভূমিকায়। ১৭ বছর পরে সেই দুদক এখন বিড়ালের চরিত্রে অবতীর্ণ। এই বিড়াল সতর্ক, সজাগ কিন্তু পলায়নপর। এই দুদক দায় নিতে চায় না, শক্তিশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্তেও ভয় পায়।


সম্প্রতি সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে রটে গেল। যা ছিল গুজব তা সত্যের দাবিদার হয়ে উঠল। আশা করা গিয়েছিল, এ রকম জনসমর্থন, আন্তর্জাতিক আলোচনা এবং (ভেতরে যাই থাক) সরকারের প্রকাশ্য ‘নিরপেক্ষতা’ দেখে দুদক হয়তো এই দুটি ঘটনায় তার দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করবে। অন্তত নিজেদের ভাবমূর্তিটায় শান দেওয়ার এই সুযোগ হেলায় হারাবে না। কিন্তু এই দেশে মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক। 


সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের দুই ভাইয়ের ‘মিথ্যা তথ্যে ই-পাসপোর্ট ও এনআইডি জালিয়াতি’র অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেছেন, এতে আজিজ আহমেদের দোষ নেই। তবে অভিযোগ দুটি খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। (ইত্তেফাক অনলাইন, ১০ জুন) 
দুদকের শীর্ষ কর্মকর্তার এমন বয়ান কার পক্ষে যায়? ভয়ংকর সব দুর্নীতির হোতারা আর লজ্জা পাচ্ছেন না, তাদের বিষয়ে বলতে লজ্জা পাচ্ছে বরং দুদক। আগে দুর্নীতি করা হতো রেখে-ঢেকে, এখন দুর্নীতির অভিযোগগুলিকেই ঢেকে রাখা হয়। ব্যাংক ব্যবস্থাকে যারা তছনছ করে দেশের অর্থনীতিকে ভেতর থেকে আঘাত করেছে, তাদের বিষয়ে তদন্ত বা সংবাদ প্রকাশেও বাধা আসে। গণমাধ্যম সেসব বলতে বা লিখতে সাহস পায় না। কিন্তু দুর্নীতির শিরোমণিরা মঞ্চ ও মসনদের চারপাশে অকাতরে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। 


দুদকের এক কমিশনার এও বলেছেন, ‘সমাজে যাদের ক্ষমতা আছে তারাই দুর্নীতি করে। আপনারা সিআইপি, ভিআইপি যাদেরকে সম্মান দিয়ে এগিয়ে আনতে যান তারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে তাদের মুখ উন্মোচন করতে হবে। সামাজিকভাবে তাদের বয়কট করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাবানদের ভয় পেলে চলবে না। কালোকে সর্বদা কালো বলতে হবে।’ (সমকাল, ১০ জুন)
দুদকের নিজের যা নাই, অর্থাৎ সাহস, তার জোগান দেবে সাংবাদিকেরা? তারা কি ভিনগ্রহের বাসিন্দা? সাংবাদিককে কি দেশে থাকতে হয় না?  


আজকে কালো টাকা সাদা টাকাকে হঠিয়ে দিচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকাকে সাদা করার শর্ত হিসেবে ১৫ শতাংশ কর ধার্য করার প্রস্তাব এনেছেন। অথচ সৎ আয়ের উপার্জনকারীদের দিতে হবে ৩০ শতাংশ! দুর্নীতির টাকায় অথবা অপ্রদর্শিত আয়ে ফ্ল্যাটবাড়ি কেনা হলে সেই টাকাকে ‘হালাল’ করার দাবি তুলেছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা। সংসদে একজন এমপি কালো টাকা সাদা করায় ১৫ শতাংশ কর ধার্যের প্রস্তাবকেও বাড়াবাড়ি মনে করেন। তিনি চান আরও কম কর ধরা হোক। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us