উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শেষ হলো কি?

যুগান্তর ড. আর এম দেবনাথ প্রকাশিত: ০৮ জুন ২০২৪, ১১:৫৮

এবারের বাজেটে (২০২৪-২৫) গরিব দেবে টাকা, খরচ হবে প্রশাসন ও সুদে। আর উন্নয়নের টাকা আসবে ঋণ থেকে। বরাবরের চিত্রের মতো এবারও বাজেটের চিত্র একই। একটু ব্যাখ্যা দরকার। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ৪ লাখ ৮০ হাজার জোগাড় করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মধ্যে ৬৩ দশমিক ৪ শতাংশ রাজস্ব আসবে ভ্যাট, আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক এবং ‘অন্যান্য’ হিসাবে। আমরা সবাই জানি এর সম্পূর্ণ বোঝা চাপবে গরিব, মধ্যবিত্তের ওপর। কারণ তারাই ভোগ করে। এখানে ধনী-দরিদ্র নেই। সবাই এক হারে কর দেবে। দ্বিতীয়ত, খরচের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমাদের মোট ব্যয় হবে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালন (রাজস্ব) এবং উন্নয়ন বাজেটের টাকা আছে। শুধু রাজস্ব ব্যয় হবে ৫ লাখ ২৫ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। এ রাজস্ব ব্যয়ের মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ ব্যয়ই হবে প্রশাসনের জন্য এবং সুদ ব্যয়ের জন্য। সুদ ব্যয় মোট রাজস্বের ২২ শতাংশ। জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় ৫ দশমিক ৬ ভাগ টাকা খরচ হবে। পেনশনে যাবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ টাকা এবং প্রশাসনের জন্য খরচ হবে ৯ শতাংশ টাকা। এর সঙ্গে যদি ভর্তুকি ও প্রণোদনার ২০ শতাংশ টাকা যোগ করা হয়, তাহলে মোট রাজস্ব ব্যয়ের ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ টাকাই মাত্র ৫টি খাতে। রাজস্ব আয় এবং রাজস্ব ব্যয়ের পর ‘উন্নয়নের’ জন্য কী রইল? বলাই বাহুল্য, উন্নয়নের জন্য আর বাকি কিছু রইল না। অনুদানসহ মোট ঘাটতি ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) পরিমাণ/আকার হচ্ছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এটা বরাবরের ঘটনা। এ বিপুল ঘাটতি মিটবে অভ্যন্তরীণ ঋণ এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে। এ ক্ষেত্রে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ বেড়ে হবে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। দেশের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ঋণ নেবে সরকার ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার এ খাত থেকে কোনো ঋণ করেনি। বরং সঞ্চয়পত্রের টাকা পরিশোধ করেছে। অর্থায়নের ক্ষেত্রে দুটি/তিনটি অসুবিধা হবে। এক. এত বিদেশি ঋণ ডলার সংকটের দিনে পাওয়া যাবে কি? দুই. ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে দেশে বেসরকারি খাতের ঋণের ঘাটতি দেখা দেবে।


এমনিতেই ‘প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট’ কমেছে। কমেছে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বেসাতি সমস্যার সৃষ্টি করবে নাকি? তবে সুবিধা হবে ব্যাংকগুলোর, যেহেতু সরকারি খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম হারে বৃদ্ধি পাবে। তিন. সঞ্চয়পত্রে কি মানুষ যাবে? এ মুহূর্তে সঞ্চয়পত্রের ওপর সুদের হার ব্যাংক আমানতের সুদের চেয়ে কম। মানুষ তাই ব্যাংকমুখী। এ কয়েকটি কারণে বাজেটের ঋণ সমস্যা মিটবে না বলেই মনে হয়। আবার রাজস্বের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংগ্রহ করতে হবে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ৭০ হাজার কোটি টাকা বেশি। অথচ ‘জিডিপি’ কিন্তু সেভাবে বাড়ার সম্ভাবনা নেই। ২০২৩-২৪-এ তা হবে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। আগামী বছরের জন্য নির্ধারিত হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আবার মূল্যস্ফীতির টার্গেট করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, যা এখন প্রায় ১০ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও বেশি। এ প্রেক্ষাপটে রাজস্ব বোর্ড এত রাজস্ব কোত্থেকে জোগাড় করবে এটাই বড় প্রশ্ন। এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সরকার এবার নানাভাবে, নানা কায়দায় ভ্যাটের আওতা বাড়িয়েছে, ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার করেছে। আয়করের ওপর বেশি জোর দিয়েছে। বলাই বাহুল্য এর বোঝা সাধারণ মানুষকেই বহন করতে হবে। পণ্য মূল্যবৃদ্ধির তালিকা দেখলেই বোঝা যায় এটি।


মোবাইল ফোনের সিম, ইন্টারনেট, আইসক্রিম, এনার্জি ড্রিংকস, লন্ড্রি খরচ, লটারি, নিরাপত্তা প্রহরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ে কর, বিদেশি ফুল, বিদেশ ভ্রমণ, রেস্তোরাঁয় খাওয়া-দাওয়া, আমসত্ত্ব ও ফলের রস, বৈদ্যুতিক বাতি, পানির দেশি ফিল্টার, কমিউনিটি সেন্টার ভাড়াসহ শত শত এলাকায় করারোপ করা হয়েছে অথবা কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর বোঝা নিশ্চিতভাবেই মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষের ওপর বর্তাবে। এয়ারকন্ডিশনার, ফ্রিজ ইত্যাদির দামও বাড়বে। আয়করের ক্ষেত্রে সাধারণ আয়করদাতারা কোনো সুবিধা পাবে না, কারণ আগের করহারই অব্যাহত থাকবে। অথচ তিন বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। এখানে স্বস্তির কোনো চিহ্ন নেই। কেবল বেড়েছে উচ্চ আয়ের করদাতাদের করহার। তাদের করহার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে এখানে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ আছে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে ১৫ শতাংশ হারে। কেউ এ সুযোগ নিলে কেউ কোনো আপত্তি তুলতে পারবে না। এখন একজন উচ্চ আয়ের লোক, যাকে ২০/২৫/৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে, তিনি ওই টাকা কালো হিসাবে দেখিয়ে ১৫ শতাংশ কর দিয়েই স্বস্তি পাবেন। মজা হচ্ছে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য কোনো সুখবর না থাকলেও কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে করের ক্ষেত্রে সুখবর আছে। পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির করহার কিছু শর্ত সাপেক্ষে কম করা হয়েছে। ‘পাবলিকলি ট্রেডেড নয়’, তাদের করহারও হ্রাস করা হয়েছে। একইভাবে নানা কায়দায় এক ব্যক্তির কোম্পানিও কর সুবিধা পাবে। কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের জন্য নানা সুখবর থাকলেও মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানো হয়নি। তবে একটি ভালো সিদ্ধান্ত আছে। মাননীয় সংসদ-সদস্যরা আর করমুক্ত গাড়ি আমদানি করতে পারবেন না। ‘মিনিমাম’ করও ঠিক রাখা রয়েছে। দোকানিদের কর পরিশোধ সার্টিফিকেট দোকানে দোকানে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। বড় বড় আমানতের ক্ষেত্রে শুল্ককর বাড়ানো হয়েছে। এক কোটি এক টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানতের ওপর আবগারি করের হার ছিল ১৫ হাজার টাকা। এটাকে ভাগ করে এক থেকে দুই কোটির ক্ষেত্রে করা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। এর ওপরে হলে তা করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। তবে আয়করদাতাদের মধ্যে যাদের আয় ১২-১৩ লাখ টাকার মধ্যে, তাদের আয়কর সামান্য হ্রাস পেতে পারে। সম্পদ কর যা সারচার্জ নামে অভিহিত, তার মধ্যেও কোনো পরিবর্তন নেই। উত্তরাধিকার সম্পদ হস্তান্তরেও কোনো কর নেই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us