কী বর্ণময় জীবনই না ছিল পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের। পেশার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি আত্মমর্যাদার সঙ্গে দিন কাটিয়েছেন। পেশাদার পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশ সার্ভিসের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ পদেই তিনি চাকরি করেছেন।
চাকরিজীবনের সুদীর্ঘ সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। শুধু সরকারে থাকাকালে নয়, আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলেও ছিল, তখনো তিনি একই সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে বেনজীর অবসরে যাওয়া অবধি ঢাকায় চাকরি করেছেন। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় সব চাহিদাই মিটিয়েছেন।
তিনি যে আওয়ামী লীগের বিশেষ পছন্দের লোক ছিলেন, তা তাঁর গত ১৫ বছরের চাকরির প্রোফাইল দেখলেই বোঝা যায়। সরকারি কর্মকর্তা হয়েও যে তিনি মনেপ্রাণে আওয়ামী লীগের ছিলেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ কথা তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন। পুলিশের অনেক আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সমাবেশে, পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতি তাঁর যে বিশেষ দুর্বলতা আছে, তা তিনি নির্দ্বিধায় প্রকাশও করেছেন।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে সরকারপ্রধানের বিশেষ পছন্দের লোক না হলে কেউ পুলিশের মহাপরিদর্শক হতে পারেন না। ঠিক একই কথা সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। গত বেশ কয়েকটি নিয়োগ-প্রক্রিয়া দেখে, সাধারণ মানুষের এ ধারণাই হয়েছে যে আমাদের দেশে বাহিনীপ্রধান হতে হলে শুধু পেশাগত যোগ্যতা থাকলেই হয় না, রাজনৈতিক আনুগত্যও থাকতে হয়। কয়েক দশক ধরেই রাজনৈতিক আনুগত্যও যোগ্যতার মাপকাঠি ধরা হচ্ছে।
আবার দেখা গেছে, কারও পেশাগত যোগ্যতারও প্রয়োজন পড়েনি, শুধু আনুগত্য দেখিয়েই বৈতরণি পার হয়ে গেছেন। দেশের মানুষ মনে করেন, যিনি বা যাঁরা এসব পদে নিয়োগ দেন, তাঁরা দেখেন তাঁদের অভিপ্রায় পূরণ করার মতো মানসিকতা আছে কি না। এসব ক্ষেত্রে পেশাদার যোগ্য ব্যক্তিকে অতিক্রম করে হলেও সেই ব্যক্তিকেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও সাবেক সেনাবাহিনীপ্রধান আজিজ আহমেদকে নিয়ে তোলপাড় শুরু হওয়ার পর থেকে মূল ধারার সংবাদমাধ্যম ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয় নিয়ে মুখরোচক অনেক আলোচনাই হচ্ছে।
এসব আলোচনায় এ দুজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত সততা ও পেশাগত যোগ্যতার পাশাপাশি তাঁদের পরিণতি নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, সরকারের প্রয়োজনে এসব ব্যক্তিকে ব্যবহার করে, প্রয়োজন ফুরিয়ে যেতেই তাদের ছুড়ে ফেলা হচ্ছে; বিশেষ করে বেনজীর আহমেদকে নিয়ে গত সপ্তাহে বেশ কয়েকটি সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। এর মধ্যে একটি, ‘বেনজীর কেন খরচের খাতায়’। অন্য আরেকটি শিরোনাম দেখেছি, ‘প্রবল প্রতাপশালী বেনজীর আহমেদ কি এখন বলির পাঁঠা!’