ঢাকার খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ায় থাকেন নামিরা ইসলাম (ছদ্মনাম)। স্বামী, এক মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। এবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে তাঁর ছেলে। নামিরার স্বামী সরকারি কর্মকর্তা, ঢাকার বাইরে পোস্টিং। ছেলের পড়াশোনার যাবতীয় তদারকি, বিষয় অনুযায়ী প্রাইভেট টিউটর, স্কুলে শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ, বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর জন্য ব্যবহারিকের খাতা তৈরি, সবকিছুই দেখভাল করেছেন নামিরা। ছেলে স্কাউটের সঙ্গেও যুক্ত ছিল। সেখানেও নামিরাকে সময় দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে বেশ পেরেশানি গেছে তাঁর।
তারপরও নামিরার স্বামীর মন কিছুটা ভার। কারণ, ছেলে জিপিএ-৫ পেলেও নব্বইয়ের ঘরে তার নম্বর কম। সরাসরি এ নিয়ে নামিরাকে তিনি কিছু বলেননি সত্য, কিন্তু আকার-ইঙ্গিতে বোঝাতে চেয়েছেন যে ছেলেমেয়ের দিকে নামিরার আরও মনোযোগ দেওয়া দরকার ছিল। নামিরা ভাবছেন, আর কী করার বাকি ছিল তাঁর!
আফরোজা খানের (ছদ্মনাম) গল্পটা একটু অন্য রকম। স্বামী ও দুই ছেলে নিয়ে তাঁর সংসার। থাকেন সেগুনবাগিচায়। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আফরোজা। মাইনে মোটামুটি। স্বামী একটি বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠানের মালিক, যদিও সেটি তেমন বড় নয়। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে টুকটাক আবৃত্তি করতেন আফরোজা। একটি নাটকের দলেও ছিলেন। বিয়ের পর আবৃত্তি ও নাটকের নেশা পুরোপুরি ছাড়তে পারেননি। তা ছাড়া যেসব সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তারাও পিছু ছাড়েনি। আফরোজাও তাই কতকটা নিজের ইচ্ছায়, কতকটা তাদের চাপে কিছু কিছু অনুষ্ঠানে গেছেন। কোনো কোনো দিন বাসায় ফিরতে তাই সন্ধ্যা সাতটা-সাড়ে সাতটা বেজে গেছে। তবে এ নিয়ে দুই ছেলের তেমন অনুযোগ নেই।
আফরোজার বড় ছেলে এখন একটি বেসরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষে পড়ে। গত বছর মাধ্যমিকে সামান্যর জন্য জিপিএ-৫ পায়নি। ২০২০ সালে করোনার বছর অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত এই ছেলে। তখন অনলাইনে ক্লাস করার সুবিধার কথা চিন্তা করে ছেলেকে স্মার্টফোন কিনে দেন বাবা, অবশ্য আফরোজা আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু পরে সশরীর ক্লাস শুরুর পরও মুঠোফোনের নেশা কাটাতে পারেনি ছেলে। পড়াশোনার পাশাপাশি মুঠোফোনে বন্ধুদের সঙ্গে জোট বেঁধে গেমসও খেলেছে। ছেলের পড়াশোনার দিকে যথেষ্ট খেয়াল রেখেছেন আফরোজা। কোচিংয়ে কী পড়ানো হচ্ছে, তদারক করেছেন। শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত কথাবার্তা বলে গেছেন। তারপরও জিপিএ-৫ পায়নি ছেলে।