২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সরকার ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এর অনুমোদন দেয়। এটি ৮২ বছরের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। জলবায়ু পরিবর্তনে ভবিষ্যতে কী ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে, সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যে কোনো পরিকল্পনায় থাকা অনেকটা কঠিন; কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনে অনিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’-এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, ডেল্টা প্ল্যানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করা সম্ভব। মোটা দাগে বলা যেতে পারে, ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট অনিশ্চয়তাকে গুরুত্ব দিয়েই ডেল্টা প্ল্যানের যাত্রা শুরু হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে নেদারল্যান্ডসের সহায়তায় একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশে ডেল্টা প্ল্যানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও অধিদপ্তরের চাহিদা মোতাবেক প্রায় ৮০টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছার লক্ষ্যে প্রকল্পগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২০ শতাংশের বেশি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। ডেল্টা প্ল্যান জলবায়ু পরিবর্তনে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য ৬টি হটস্পট চিহ্নিত করেছে। এ হটস্পটগুলোয় উপকূলীয় অঞ্চল, বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চল, হাওড় ও আকস্মিক বন্যা এলাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নদী ও মোহনা এবং নগরায়ণ এলাকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮২ বর্গকিলোমিটার এলাকা রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের মোট আয়তন প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার। ডেল্টা প্ল্যানের চিহ্নিত হটস্পট অনুযায়ী দেখা যায়, দেশে মাত্র ১২ হাজার ৮৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা ঝুঁকিবিহীন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে প্রায় ৯২ শতাংশ এলাকা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। সেই ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ যাত্রা শুরু করেছে। আশা করা হচ্ছে, ৭৬ বছরের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট ক্ষতি মোকাবিলার জন্য ডেল্টা প্ল্যানই যথেষ্ট।