মালয়েশিয়ায় অভিবাসী প্রত্যাশীদের দুর্ভোগ কয়েকদিনে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই জীবিকার তাগিদে, উন্নত জীবনের আশায়, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, প্রবাসে সাময়িকভাবে কর্মসংস্থানের চল শুরু হয়েছে।
আর একই উদ্দেশ্যে স্থায়ী আবাসন গড়ে তোলা প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ার শুরু পঞ্চাশের দশক থেকেই। জানা যায়, মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় ৮-১০ লাখ (সঠিক পরিসংখ্যান নেই) এবং তাদের অনেকেই নানা কারণে ভালো নেই। কারণ মালেয়েশিয়ায় ৯৬ শতাংশ বাংলাদেশি শ্রমিক ঋণগ্রস্ত (কালের কণ্ঠ, ১৮ মে ২০২৪)।
পঞ্চাশ বছরের অভিজ্ঞতায় অভিবাসন খাতে আইন-নীতিমালা যেমন হয়েছে, অন্য অনেক ক্ষেত্রের মতো এসবের সুষ্ঠু প্রয়োগ হয়নি। এর কয়েকটি মূল কারণ এখানে উল্লেখ করতে পারি।
অভিবাসন খাত একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ, যা বেসরকারি। আর এই উদ্যোগ নিয়ন্ত্রণের কাজটি করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর। সমন্বয় ও জবাবদিহিতার ঘাটতি এড়াতে চলে ব্লেম গেম আর ভুক্তভোগী হন অভিবাসী প্রত্যাশী সাধারণ মানুষ।
আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, অভিবাসন প্রক্রিয়াটি এখনো অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তি পর্যায়ে হয়ে থাকে, যা অনেক অংশে অনানুষ্ঠানিক এবং দলিলপত্র বা প্রমাণবিহীন। বিশেষ করে মালয়েশিয়ার অভিবাসনের ক্ষেত্রে একটি দুষ্ট চক্র সক্রিয়, যারা সমাজে ও নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে প্রভাবশালী এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে পারে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার অচিরেই মালয়েশিয়া সফর করবেন ও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে মালয়েশিয়ায় শ্রম অভিবাসনের অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিয়ে আলাপ করবেন।
২৬ মে ২০২৪ হাইকমিশনারের দপ্তর থেকে তাদের একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারকে একটি চিঠি প্রেরণ করেছে। সেইখানে অভিবাসন খাতের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে তারা সেগুলো নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন।
সাম্প্রতিক কালে একটি নির্দিষ্ট দেশের অভিবাসীদের অধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের উদ্বেগ প্রকাশ নজিরবিহীন। তবে জাতিসংঘের অভিবাসন সংক্রান্ত দপ্তরের নিয়মিত পর্যালোচনায় বিভিন্ন দেশের অভিবাসী অধিকারের বিশ্লেষণে মালয়েশিয়ায় কর্মরত বা কর্মপ্রত্যাশী বাংলাদেশি অভিবাসীদের দুর্ভোগ কমানোর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা নতুন নয়।