দেশরক্ষা বাঁধ খেয়ে ফেলছে মহাজাগতিক ইঁদুর

প্রথম আলো আনিসুল হক প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২৪, ১২:৩৪

প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় (৩০ মে, ২০২৪) একটা ছবির দিকে তাকিয়ে আছি। খুলনার কয়রার দশালিয়া এলাকায় কপোতাক্ষ নদের পাড়ে সাধারণ মানুষ একটা ভেঙে যাওয়া বাঁধ নিজেরা মেরামতের চেষ্টা করছেন। শত শত মানুষ হাত লাগিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় রিমাল বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। জানমালের ক্ষতি হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন। খেতের ফসল নষ্ট হয়েছে। লোনাপানি ঢুকে পড়ায় এই সব জমিতে ভবিষ্যতে ফসল ফলানো কঠিন হয়ে পড়বে।


মাছের ঘের ভেসে গেছে। মানুষ মারা গেছে। গবাদিপশুর ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে সরাসরি মারা গেছেন ১৫–১৬ জন। অতীতে এই দেশে ঘূর্ণিঝড়ে-জলোচ্ছ্বাসে লাখো মানুষ মারা গেছেন। সে প্রেক্ষাপটে আজকের ক্ষতিকে রবীন্দ্রনাথের কবিতার মতো সামান্য ক্ষতি বলে ফেলা হলে খুব বড় ভুল করা হবে। যার গেছে, তার সবই গেছে। যিনি মারা গেছেন, তাঁর তো পুরোটাই গেছে। তাঁর পরিবারের যে ক্ষতি, তা তো পাহাড়সমান। কিন্তু যাঁরা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, খেতের ফসল যাঁদের তলিয়ে গেছে, মাছের ঘের ভেসে গেছে, তাঁদের রইলটা কী?


যে ছবিটা দেখছি, তাতে বাঁধের যে অংশটা ভেসে গেছে, তার দৈর্ঘ্য মিটারে মাপা যাবে। এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধটাকে কি আগেই ঝুঁকিমুক্ত করা উচিত ছিল না? আমরা ঢাকায় বসে, টেবিল বা ক্যামেরার সামনে এই রকম বড় বড় কথা বলতে পারি। কিন্তু কপোতাক্ষ নদের মানুষ আমাদের মতো খালি কথায় চিড়া ভেজাচ্ছেন না। তাঁরা নিজেরা নেমে পড়েছেন। প্রথমে পানিতে তাঁরা খুঁটি পুঁতছেন দুই পাশে, সার করে। এরপর তার মধ্যে মাটি ভরছেন।


এখানে এসে বুক ভেঙে আসতে চায়। এই দেশের সাধারণ মানুষ এই রকম অপরাজেয়, এই রকম সংশপ্তক। এদের কি ডেকে বলব, ভাই ও বোনেরা, আপনারা যে বুকে আগলে বাঁধ রক্ষা করতে চাইছেন, আপনারা কি জানেন, আপনাদের এই বাঁধের নিচে অবিরাম ছিদ্র বানানো হচ্ছে?  ইঁদুর আমাদের মাটির বাঁধগুলোর নিচে অসংখ্য ছিদ্র বানিয়ে রাখে, পানি বাড়লে বাঁধগুলো যে সহজেই ভেঙে যায়, তার একটা কারণ ইঁদুরের বানানো গর্ত। আমার এই তথ্য জানা থাকলে আপনারা এলাকার মানুষ, ভুক্তভোগী, আপনাদের এই তথ্য না জানার কোনোই কারণ নেই।


কিন্তু আমি ইঁদুরের কথা বলছি না। আমি বলছি মহাজাগতিক ইঁদুরের কথা। যারা দেখতে মানুষের মতো। সেই সব মানুষ, যাদের দাঁত ইঁদুরের চেয়েও ধারালো, যাদের হাঁ গন্ডারের হাঁ–এর চেয়েও বড়, যাদের ক্ষুধা অজগরের ক্ষুধার চেয়ে সহস্র গুণ বেশি। আপনাদের এই জীবনবাজি রেখে লড়াই করে দেশকে রক্ষার জন্য বাঁধ নির্মাণের মতো শত শত উদ্যোগ চেষ্টার নিচে তারা গর্ত বানাচ্ছে, বিশাল অজগরের মতো তারা গিলে খাচ্ছে সব উন্নয়নচেষ্টা, মানুষের সমুদয় উদ্যোগ।


বিদেশিদের বানানো একটা ইউটিউব ভিডিওর একটা দৃশ্য আমি ভুলতে পারি না। অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা এক ফুড-ব্লগার আমাদের কারওয়ান বাজারের মাছের আড়ত দেখিয়ে ট্রেনে চড়ে চলে গেছেন ময়মনসিংহ। সেখানে মাছের চাষ দেখাবেন। এরপর তিনি উঠে পড়লেন লোকাল ট্রেনের ছাদে। একজন মাছের পোনা বিক্রেতার সঙ্গে। পোনা বিক্রেতা ময়মনসিংহের হ্যাচারি থেকে পোনা কিনে দুটো পাতিলে রেখেছেন, এরপর সেগুলো নিয়ে উঠে পড়েছেন ট্রেনের ছাদে। ট্রেন থেকে নেমে তিনি যাবেন একটা লোকালয়ের হাটে। সেখানে পোনা বিক্রি হবে। এই পুরোটা পথ এই ব্যবসায়ী সারাক্ষণ দুই পাতিলের পানি নাড়ছেন। তিনি যদি পানি নাড়া বন্ধ করেন, পোনা মারা যাবে। এক পলকের জন্যও তিনি পানি নাড়া বন্ধ করছেন না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us