ঘূর্ণিঝড়ের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘সাইক্লোন (Cyclone)’। এটি গ্রিক শব্দ ‘কাইক্লোস (Kyklos)’ থেকে এসেছে। প্রতিবার ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির মৌসুম ভিন্ন ভিন্ন। উত্তর আটলান্টিকে ঘূর্ণিঝড় মৌসুম শুরু হয় ১ জুনে এবং শেষ হয় ৩০ নভেম্বরে। বাংলাদেশে মূলত বর্ষাকালের শুরুতে এপ্রিল-মে মাসে এবং বর্ষার শেষে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ দেখা দেয়।
ঘূর্ণিঝড় ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন:
সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানীরা অনেকে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে দায়ী করেছেন। ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রের তাপমাত্রা ১৯৭০ সালের পর প্রায় এক ডিগ্রি ফারেনহাইট বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই এক ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এখন আগের চেয়ে শক্তিশালী এবং বেশি সংখ্যক ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হচ্ছে।
তারা এই অস্বাভাবিকতার জন্য গ্লোবাল ওয়ার্মিং (Global Warming)-কে দায়ী করছেন। বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য প্রধানত অধিক হারে গ্রিনহাউস গ্যাস (Carbon dioxide ইত্যাদি) নির্গমন দায়ী যা মূলত উন্নত বিশ্বে স্থাপিত বিভিন্ন পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে নির্গত হয়।
উল্লেখযোগ্য ঘূর্ণিঝড়:
বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত যেসব ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে, তাদের মধ্যে আলোচিত কিছু ঘূর্ণিঝড়ের তালিকা উল্লেখ করা হলো—
৭ -১৩ নভেম্বর ১৯৭০: ১৯৭০ ভোলা ঘূর্ণিঝড় সমগ্র বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারি হিসাব অনুসারে মৃত্যুর সংখ্যা ৫ লাখ কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি ধারণা করা হয়। গবাদিপশু মৃত্যু প্রায় ১০ লাখ, বাড়িঘর ৪ লাখ এবং ৩,৫০০ শিক্ষাকেন্দ্র বিধ্বস্ত হয়। বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ২২২ কিমি/ঘণ্টা এবং ঝড়ের প্রভাবে জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায় ১০.৬ মিটার।
২৪-২৮ নভেম্বর ১৯৭৪: ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের নিকটবর্তী উপকূলীয় অঞ্চল এবং সমুদ্রমুখী দ্বীপে আঘাত হানে। বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ১৬১ কিমি/ঘণ্টা এবং জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ২.৮-৫.২ মিটার। এই ঘূর্ণিঝড়ে মৃতের সংখ্যা ২০০ জন। ১০০০ গবাদিপশু মারা যায় এবং ২,৩০০ ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে।
২৪-২৫ মে ১৯৮৫: তীব্র ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী এবং উপকূলীয় অঞ্চলে (সন্দ্বীপ হাতিয়া ও উড়ির চর) আঘাত হানে। চট্টগ্রামে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ১৫৪ কিমি/ঘণ্টা, সন্দ্বীপে ১৪০ কিমি/ঘণ্টা, কক্সবাজারে ১০০ কিমি/ঘণ্টা এবং ঝড়ের কারণে জোয়ারের উচ্চতা ৩.০-৪.৬ মিটার ছিল। মৃতের সংখ্যা ১১,০৬৯ জন। ১,৩৫,০৩৩ গবাদিপশু মারা যায় এবং ৯৪,৩৭৯টি বসতবাড়ি ও ৭৪ কিমি রাস্তা ও বাঁধ বিধ্বস্ত হয়।
২৪-৩০ নভেম্বর ১৯৮৮: তীব্র ঘূর্ণিঝড়টি যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর এবং বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় প্রচণ্ড আঘাত হানে। বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ১৬২ কিমি/ঘণ্টা একই সাথে ছিল জলোচ্ছ্বাসের আঘাত যা মংলা বন্দরে পরিমাপ করা হয় ৪.৫ মিটার। মৃতের সংখ্যা ৫,৭০৮ জন। সুন্দরবনে অসংখ্য বন্যপ্রাণী ও ৬৫,০০০ গবাদিপশু মারা যায়। বিনষ্ট হওয়া ফসলের মূল্য আনুমানিক ৯.৪১ বিলিয়ন টাকা।