বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। প্রায় সারাবছরই এখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগে থাকে। বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী ও ভাটি অঞ্চলে আমাদের অবস্থান হওয়ায় এমন দুর্যোগ। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যে কয়েকটি দেশ সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী বাংলাদেশ তাদের প্রথমদিকেই অবস্থান করছে। গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্সে আমরা বিশ্বের মধ্যে সপ্তম দুর্যোগঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত।
মূলত সমুদ্রতীরবর্তী দেশগুলোই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমরা প্রতিরোধ করতে পারি না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। কিন্তু এগুলোর প্রভাব মোকাবিলায় আমরা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারি।
আমরা দাবি করছি, দুর্যোগ প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ এরই মধ্যে বিশ্বের রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি কী সেটা আলোচনা সাপেক্ষ।
সময়ের বিবর্তনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশ হয়েছে। এক সময়ে আবহাওয়া অফিসেরও পূর্বাভাস জানার জন্য আজকের মতো প্রযুক্তি ছিল না। সেই পূর্বাভাস মানুষের কাছে পৌঁছানোর মতো আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিও ছিল না। রেডিও ও সংবাদপত্রই ছিল একমাত্র প্রচারমাধ্যম। সবার কাছে রেডিও ও ছিল না। গভীর সমুদ্রে সেই রেডিও বার্তা শোনা যাবে এমন ফ্রিকোয়েন্সিও ছিল না। আজ দেশের নদীগুলোর দুই তীর ঘিরে রয়েছে শত শত মোবাইল টাওয়ার। রেডিও অনেক আগেই বিলিন হয়েছে। নদীপথে চলাচলকারী যাত্রী ও জেলেদের হাতের মুঠোয় আজ মোবাইল ফোন। সবাই যোগাযোগের আওতায়। গভীর সমুদ্র বন্দরেও রয়েছে যোগাযোগের ব্যবস্থা। রয়েছে নৌ বাহিনীর টহল জাহাজ। ঝড়ের আগেই সবাইকে তীরে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে তারা। রয়েছে কোস্ট গার্ড। সবচেয়ে বড় কথা মানুষ আজ আগের চেয়ে অনেক সচেতন। দুর্যোগে আজ যে ক্ষয়ক্ষতি কম হচ্ছে তার প্রধান কারণই হচ্ছে মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। মানুষ আগে থেকেই আবহাওয়া পূর্বাভাস জানতে পারছে। পূর্বাভাস জানার জন্য আজ আর তাদের দেশের আবহাওয়া দপ্তরের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে না। মোবাইলে মোবাইলে রয়েছে আবহাওয়া জানার নানা অ্যাপস।
মানুষ এখন আগে থেকেই নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে পারছে। সমুদ্র বা নদী তীরবর্তী অঞ্চল থেকে মানুষ অধিকতর নিরাপদ মূলভূমিতে আশ্রয় নিতে পারছে। এছাড়া সরকার উপকূলবর্তী অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করেছে। মানুষ আগের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী হয়েছে। ফলে তাদের ঘরবাড়ি স্থাপনা আগের চেয়ে উন্নত ও টেকসই হয়েছে। গ্রামে এখন ছনের ঘর দেখা যায় না। বাশের খুটির ঘর আর আজ আর নেই বললেই চলে। উত্তরাঞ্চলে যদিও এখনও মাটির ঘর আছে। কিন্তু ছনের ঘর প্রায় নেই বললেই চলে। বাশ বা কঞ্চি দিয়ে ঘরের চাল আজ অতীত। বসতবাড়ির গাঁথুনি আগের চেয়ে অনেক শক্ত।
আগে কালবৈশাখী ঝড়েও গ্রামের বহু ঘর বাড়ি উড়ে যেতো। শৈশবে আমি গ্রামে ছিলাম। কালবৈশাখের সন্ধ্যাগুলো ছিল আমাদের জন্য আতঙ্ক। মা আমাদের ভাইবোনদের নিয়ে গুটিশুটি দিয়ে ঝড়ের সময় ঘরের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গায়টায় নিয়ে বসে থাকতো। আমাদের ঘরের অবস্থা ছিল খুবই নড়বড়ে। গ্রামের অধিকাংশ ঘরবাড়ির একই অবস্থা ছিল।