ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদ সম্প্রতি ‘শেয়ার অব রিলিজিয়াস মাইনরিটিজ: আ ক্রস-কান্ট্রি অ্যানালাইসিস (১৯৫০-২০১৫)’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি দেশটির হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
প্রতিবেদন বিশ্বের ১৬৭টি দেশের ৬৫ বছরের তথ্য ব্যবহার করে বিশ্বজুড়ে ধর্মীয় সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর আনুপাতিক হার পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যদিও এটি একটি বৈশ্বিক প্রতিবেদন, এটিতে ভারতীয় উপমহাদেশ, সার্ক অঞ্চল ও মিয়ানমারের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটির মূল ধারণা এই যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংখ্যা বৃদ্ধি রাজনৈতিক পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকে এবং তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু প্রতিকূল পরিবেশে এর ঠিক উল্টোটি ঘটে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভারতে ১৯৫০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে হিন্দু জনসংখ্যার আনুপাতিক হার কমেছে ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ, কিন্তু মুসলিম জনসংখ্যার আনুপাতিক হার বেড়েছে ৪৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। একই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু জনসংখ্যা ২৩ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে, অর্থাৎ ১৫ শতাংশ কমেছে।
পাকিস্তানে হিন্দু জনসংখ্যা ১৩ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ভুটান ও শ্রীলঙ্কায়ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ নেপালে সংখ্যালঘু মুসলিম ও খ্রিষ্টান জনসংখ্যা সামান্য বেড়েছে।
ধর্মীয় জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতের এই পরিবর্তনের খবর ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। একটি পুরোনো ভুল ধারণাকে আবার জাগিয়ে তুলেছে যে মুসলমানদের সংখ্যা শেষ পর্যন্ত ভারতে হিন্দুদের চেয়ে বেশি হয়ে যাবে। ভারতের জনসংখ্যার ৯৪ শতাংশ হিন্দু ও মুসলমান। এ জন্য এই দুই সম্প্রদায়ের জন্মহারের তারতম্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়।
এ বিতর্কের বৃহত্তর সামাজিক ও রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। কিছু অতি উৎসাহী পণ্ডিত ব্যক্তি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে বর্তমান প্রজনন হার অব্যাহত থাকলে ২০৭১ সাল নাগাদ ভারতে মুসলমানদের সংখ্যা হিন্দুদের ছাড়িয়ে যাবে। সংবাদমাধ্যমগুলো ওই খবরকে ফলাও করে প্রচার করছে, যা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
এই দৃষ্টিভঙ্গি কতটা সঠিক? এই পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির জনসংখ্যা পরিবর্তনের সামগ্রিক চিত্র এবং হিন্দু ও মুসলমান নারীদের প্রজনন হারের গতিবিধি পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন।