ওই যে ঢাকার তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান। ঢাকার সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার পর পরীক্ষার রুটিনের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। ২০১৭ সালের ২০ জুলাই শাহবাগে সেই আন্দোলনে আরও অনেকের সঙ্গে ছিলেন তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান।
মিছিলে পুলিশ বাঁধা দেয়। বাঁধা ডিঙিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীরা। টিয়ার শেল ছোঁড়ে পুলিশ। শেলের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সিদ্দিকুর রহমান। তার ডান চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। বাম চোখের দৃষ্টিও ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভয়াবহভাবে। বাম চোখ রক্ষায় ঢাকার চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট এবং ভারতের শঙ্কর নেত্রালয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। দৃষ্টির বিনিময়ে সিদ্দিকুর রহমানকে সরকারি চাকরি দেওয়া হয়েছিল, এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের টেলিফোন অপারেটর পদে।
সিদ্দিকুর যখন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি, এক বিকেলে গিয়েছিলাম তাকে দেখার জন্য এবং খবরের রসদ জোগাড়ের আশায়। তা ছিল এক বিকেল ছোঁয়া শেষ দুপুরের কথা। চোখে ব্যান্ডেজ সিদ্দিকুর সাংবাদিক এসেছে শুনে উঠে বসার চেষ্টা করছিলেন। বড় ভাই নায়েব আলী তাকে আগলে রেখেছিলেন হাসপাতালে।
এক পর্যায়ে সিদ্দিকুর হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ভাই আমার চোখের দৃষ্টিটা ফিরিয়ে দেন ভাই। আমার বাবা নাই। এই ভাই আমাকে এই পর্যন্ত নিয়ে আসছে। এখন আমার কী হবে? আমার পরিবারের কী হবে? পাশ থেকে সিদ্দিকুরের ভাই বলে উঠেন—ভাইরে তুই কোনো চিন্তা করিস না। ভিটেমাটি যা আছে, সব বেচে হলেও তোরে লেখাপড়া করাবো।
সিদ্দিকুর রহমানদের পরিবারের কথা একটু বলি। ময়মনসিংহের তারাকান্দার ঢাকেরকান্দা গ্রামের সিদ্দিকুরদের বাবা মারা গেছেন। মা কিষানি। ভাই নায়েব আলী উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তাদের হাড়ভাঙা শ্রমে সিদ্দিকুরকে মানুষ করতে চেয়েছিলেন।
ধান ভানতে শিবের গান অনেক হলো। এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার জন্য আন্দোলন করছেন বেশকিছু শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশী তরুণ তরুণী। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বারো বছর ধরে এই আন্দোলন চলছে। তবে এই আন্দোলন বেশকিছুটা জোরদার হয়েছে।