বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো আবারও রাজপথের আন্দোলনে নামতে চায়। সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির ক্রমানুগতিক ব্যর্থতা কর্মীদের মধ্যে যে হতাশা তৈরি হয়েছে, এই মুহূর্তে কর্মীদের ধরে রাখাটাই বিএনপির বড় লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য অর্জনে তাদের অভ্যন্তরীণ আলোচনার বাইরে জোটগত বৈঠকও চলছে কয়েকদিন ধরে। প্রকাশিত সংবাদ ও সংবাদ পর্যালোচনার নিরিখে বলা যায়,তারা জামায়াত ও ভারত বিরোধিতার কৌশল নিয়ে ভাবছেন।
এর মধ্যে কঠোর ভারত বিরোধিতার বিষয়টি আপাতত পাশে সরিয়ে রাখার নীতিতে একমত তারা। বাস্তবতা হচ্ছে-মাঝে মধ্যে ভারতপ্রেমী হওয়ার উদাহরণ থাকলেও বিএনপি বরাবরই ভারতকে তাদের রাজনৈতিক শত্রুপক্ষ হিসেবেই বিবেচনা করে। আর এই বিবেচনার ফল সম্পর্কে নেতাদের চিন্তার গভীরতা নিয়ে সবসময়ই আলোচনা হয়। তারা যে অন্ধভাবে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছেন, তা বাস্তবে কতটা সম্ভব সেই বিষয়টি কি তারা ভেবে দেখেছেন?
মাস দুই আগে, বিএনপি নেতা রুহুল কবীর রিজভী সাহেব তার গায়ের কাশ্মিরি শাল আগুনে পুড়িয়ে মনে করেছিলেন, সেই আগুনের তাপ বোধহয় কর্মীদের উত্তেজিত করবে। বাস্তবতা কিন্তু তেমনটা হয়নি। কারণ তিনি শাল পুড়িয়ে যে কর্মীদের উত্তেজিত করতে চেয়েছেন সেই কর্মীদের রান্নাঘরের পেঁয়াজ, মরিচ, আদা, হলুদ, জিরার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলো ভারতীয়।
অর্থনৈতিক কারণেই শুধু তাদের কোনো কর্মীই নয়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পক্ষেও ভারতীয় সব পণ্য বর্জন করে চলা সম্ভব নয়। এমনকি যিনি শাল পুড়িয়ে ভারত বিরোধিতার জাল ফেলার চেষ্টা করেছিলেন,সেই নেতার রান্নাঘরেও ভারতীয় পণ্যের সমাহার। ভারতীয় পণ্য বর্জন করতে হলে যে নিজেরই খাদ্য বর্জন করতে হবে।
বর্জনের কালচার সবসময়ই শুভ হয় না। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে আসছে একের পর এক। তারা এই বর্জন দিয়ে কতটা অর্জন করেছে তা চোখের সামনে দৃশ্যমান। তবে নির্বাচন বর্জন আর ভারতীয় পণ্য বর্জনের মধ্যে ফারাক অনেক। নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব বিলীন হয় না। রাজনৈতিক মাঠে তাদের অবস্থান সেটাই প্রমাণ করে। কিন্তু নিত্যপণ্য বর্জনের ডাক দেওয়াটা যেমন তেমন ব্যাপার নয়।
আসলে বর্জনের সঙ্গে নিজেদের সক্ষমতার বিষয়টি জড়িত। একটা উদাহরণ দিতে চাই। বছর ত্রিশেক আগের কথা বলি। তখনও আমাদের মেয়েরা শাড়িতেই অভ্যস্ত ছিল। সেই শাড়ির প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করতো ভারতীয় উৎপাদিত কাপড়। তখন সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোতে বাজারের ব্যাগে করে ভারতীয় শাড়ি ফেরি করে বিক্রি করা হতো। দেশি শাড়ির ঘাটতি পূরণ হতো সেসব শাড়িতে।