বেশ ক’মাস ধরে ওয়াসা থেকে পানির মিটার পাল্টানোর তাগিদ আসছে। অ্যাপার্টমেন্টের কেয়ারটেকারের কাছে খোঁজ নিয়ে আমার বন্ধু জানতে পারল, মিটারের কাচের ভেতর জলীয় বাষ্প জমাট বাঁধায় বাইরে থেকে রিডিং নেওয়া দুষ্কর। তবে মিটারের সামনে ঘণ্টাখানেক আলো জ্বালিয়ে রাখলে তাপে ধোঁয়াশা ভাব চলে যায় এবং দিব্যি রিডিং নেওয়া যায়। যিনি রিডিং নিতে আসেন, তাঁর পক্ষে আগে থেকে সময় বা দিন ধার্য করা সম্ভব নয়। সে কারণে কোনো এক আঙ্কিক বিধানে সৃষ্ট গড় বিল প্রতিমাসে আসতে থাকে, যেখানে মিটার রিডিংয়ের উল্লেখ থাকে না। এসব তথ্য নজরে এলে আমার বন্ধু দুই দফায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে। সেই আলোচনার প্রাসঙ্গিক কিছু দিক এবং সেসবের সম্ভাব্য অর্থ নিম্নে উল্লেখ করছি।
ঘটনা-অ
নতুন মিটার নিতে নির্দিষ্ট দালানের ব্যবস্থাপনা কমিটির আপত্তি ছিল না। তবে যেটা পাল্টানোর কথা উঠেছিল, তা বছর দুয়েক আগে কেনা। তাই নতুন মিটার নেওয়ার আগে তারা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে মিটারটির ব্যবহারযোগ্যতার নিশ্চিতপত্র পেতে চায়। এ ধরনের আবদার কর্মকর্তাটি আগে কখনও শোনেননি। তাঁর এখতিয়ারে না থাকা সত্ত্বেও তিনি তিন মাসের নিশ্চয়তা বিধানে রাজি হলেন। কিন্তু মাত্র তিন মাস পর কাচ ঘোলাটে হলে আবারও ২০ হাজার টাকা খরচ করতে আমার বন্ধু ও দালানের অন্যরা রাজি হলো না। বাজার থেকে যাচাই-বাছাই করে মিটার কেনার সুযোগ আছে কিনা, জানতে চাইলে বলা হয়, সে অনুমোদন দিতে এ অফিস রাজি নয়। অর্থাৎ ওয়াসা অফিসের মিটারই কিনতে হবে।
ভাবনা-১
ঘটনা শোনার পর জানলাম, মিটারের বিতরণ পর্যায়ের বাজারটি একচেটিয়া। অর্থাৎ একক সরবরাহকারী নিয়ন্ত্রিত। এ ক্ষেত্রে দ্রব্যের মান ও দাম নজরদারির কোনো দায়িত্ব কি ভোক্তা অধিকার দপ্তরের নেই? সেই দপ্তরের কোনো কোনো কর্মকর্তাকে উদ্যোগী ভূমিকায় ইউটিউবে দেখা যায়; যদিও মিটার বাজারের খোঁজ সম্ভবত তারা রাখেন না। শহরের লাখ লাখ নাগরিক কি এ ব্যাপারে সরব?
ঘটনা-আ
আমার মন্তব্যের সূত্র ধরে দ্বিতীয় দফার আলোচনায় আমার বন্ধু ওয়াসা প্রতিনিধিকে প্রশ্ন করে জানল, মিটারটি বিদেশ থেকে আমদানীকৃত। এই পণ্য বাজারজাত করতে কোনো পারিশ্রমিক বা কমিশন দেওয়া হয় কিনা, জানতে চাইলে তাঁর উত্তর মেলেনি।
ভাবনা-২
নিঃসন্দেহে একটি মিটার অধিককাল ব্যবহার করতে পারলে এই দুর্দিনে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
ঘটনা-ই
নতুন মিটার বাজারজাত করার বিকল্প হিসেবে দুটো প্রস্তাব রাখা হলো। প্রথমত, প্রতিমাসে যে দিনে রিডিং নিতে আসবেন, তা আগে জানিয়ে দিলে তাপ বাড়িয়ে কাচের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়। নানাবিধ ব্যস্ততার কারণে নির্দিষ্ট কোনো দিন আগে থেকে নির্ধারণ করে মিটার পরিদর্শকদের পক্ষে জানানো সম্ভব নয় বলে জানানো হয়।
দ্বিতীয়ত, কারিগরি বিদ্যা প্রয়োগের মাধ্যমে ভেতরের বাষ্প নিষ্কাশনের সম্ভাবনা সম্পর্কে ওয়াসার ইঞ্জিনিয়ার বা গবেষণা বিভাগ কোনো পন্থা বের করেছে কিনা, জানতে চাইলে স্পষ্ট হয়, সে ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে কোনো ধারণা, তথ্য বা নির্দেশ নেই।