মানুষ বড় কাঁদছে

আজকের পত্রিকা অজয় দাশগুপ্ত প্রকাশিত: ২১ মে ২০২৪, ১১:৪৯

যাঁরা মনে করেন আমরা বিদেশে স্বর্গে বসবাস করি, তাঁদের ধারণা ভুল। একটা সময় আমিও তা-ই মনে করতাম। কিছুদিন আগেও ভাবতাম এখানে জিনিসপত্র কত সস্তা। সবাই যা খুশি তা কিনতে পারে। এখন আর পরিস্থিতি তেমন না। বদলে যাওয়া বিশ্বে সব দেশ, সব জাতিই আসলে ধুঁকছে। ছবি দেখে বা ভিডিও দেখে মনে হতে পারে, আরে, এরা তো দিব্যি স্যুট-টাই, কোট-প্যান্ট পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সমস্যা কোথায়?


সমস্যা আছে। আপনি যদি ভেতরে প্রবেশ না করেন, বুঝতে পারবেন না। এখানকার গির্জাগুলো সপ্তাহান্তে এমনকি সপ্তাহের কোনো কোনো দিন দাতব্যকাজে খোলা থাকে। সকাল থেকে গরম সসেজ, রুটি, টোস্ট, ডিমভাজি, চা, কফি বানিয়ে রাখে তারা। তারা জানে মানুষ আসবেই। মানুষের প্রয়োজন আছে আসার। এমন চ্যারিটি বহু জায়গায় এখন সংকুলান করতে পারছে না। না খাবারের, না ভিড়ের। ভিড় যে খুব চোখে পড়ার তা নয়, কিন্তু আছে। একটা সময়, এই কয়েক বছর আগেও আমি কাউকে হাত পেতে কিছু নিতে দেখিনি। নিলেও তা হাতে গোনা। এখন রাস্তায় গান গেয়ে পয়সা নেওয়া বা কাগজে নিজেকে দুস্থ লিখে বসে থাকা মানুষ বাড়ছে। সিডনিতে আমি ২০ বছরে কখনো এত অভাবী মানুষ দেখিনি।


আমার নিজের একটা ঘটনার কথা বলি। খুব সকালে মানুষ ঘুম থেকে ওঠার আগেই কাজে যেতাম। এত সকালবেলা আর যা-ই হোক, সাজগোজ চলে না। মাথার চুল থাকে উষ্কখুষ্ক। শার্টের কলার, কোটের ভাঁজও হয়তো অবিন্যস্ত। সে দিন সকালে শপিং মলের চেইন শপে দেখি চল্লিশোর্ধ্ব এক নারী খাবার কিনে যতবার টাকা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তাঁর কার্ড কাজ করছিল না। মেসেজ ছিল—অ্যাকাউন্টে টাকা নেই। আমি আর কখনো কাউকে এতটা বেপরোয়া দেখিনি। মুখ কালো করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বারবার বলছিলেন, আমার খুব খিদে পেয়েছে। আমি কিছু খেতে চাই। আমি জানি তাঁর খাবার জুটে যাবে। কিছুটা এগিয়ে বিখ্যাত চেইনশপ খাবারের দোকানগুলোতে জুটে যাবে কিছু না কিছু।


অনেকেই জানেন, আজকাল ইউরোপ ও নানা দেশে একটা সিস্টেম চালু হয়েছে। দারুণ এটি। যেমন ধরুন আমি যদি একটা মিল (পূর্ণাঙ্গ খাবার) কিনি, তাতে বার্গার-চিপসসহ যেকোনো ড্রিংকস থাকে। এখন আমি যেহেতু চা-খোর, আমি ফান্টা-কোকের বদলে চা চাই। এর সঙ্গে আমি আরেকটা জিনিস বিনা মূল্যে পাব। ৬০ পেরোলে যেকোনো সিনিয়র সিটিজেনের জন্য বাকি ড্রিংকসটা ফ্রি। এখন আমি দুটো পানীয় দিয়ে কী করব? আমি বলে দিতে পারি ওই এক কাপ কফি বা চা তোমার কাছে জমা থাক। কোনো দুস্থ বা তেমন কেউ এসে চাইলে তুমি সেটা তাঁকেই দিয়ো। শুধু ফ্রি কেন, আপনি চাইলে নিজের খাবার কেনার সময় এমন কিছু ডোনেট করতেই পারেন। যাঁরা বিক্রেতা বা দোকানে কাজ করেন, সেই সব তরুণ-তরুণী হিসাব রাখেন এবং ঠিকই কাউকে না কাউকে তা দিয়ে দেন।


বলছিলাম সে দিনের ভোরবেলার কথা। আমি এক টুকরো কলার কেক কিনে দাম চুকাতে গিয়ে শুনি, আমারও টাকা কম আছে। হতেই পারে। সব টাকা তো আর এক অ্যাকাউন্টে থাকে না। আমি সরে দাঁড়িয়ে একটু দূরে গিয়ে মোবাইলে আমার পাসওয়ার্ড ঠিক করছিলাম।


যাতে কিছু ডলার সেই অ্যাকাউন্টে পাঠাতে পারি। এ বিষয়ে সাবধানতা ও গোপনীয়তার জন্যই দূরে সরে যাওয়া। ফিরে আসতেই কাউন্টারের মেয়েটি আমার হাতে কেকটা ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘বাই।’ আমি তাকে বললাম, ‘আমি তো টাকা দিইনি। দাঁড়াও টাকা দিই।’ সে আমাকে অবাক করে দিয়ে জানিয়েছিল আর একজন মানুষ সে টাকা দিয়ে চলে গেছে। আমি সে মানুষটিকে খুঁজেই পেলাম না। আমার দরকার না থাকলেও এই মানবিক সাহায্য আমাকে মুগ্ধ করেছিল।


এখন এমনই সময়। যুদ্ধ-বিগ্রহ-অশান্তি দুনিয়াকে পাগল করে তুলেছে। আমার সব সময় মনে হয়, যে নেতা, যে নেতৃত্ব আর প্রজ্ঞা বিশ্বকে এগিয়ে দিয়েছিল, তা আর নেই। রুজভেল্টের দেশে, রিগ্যানের দেশে বাইডেন বেমানান। বেমানান ইউকের প্রধানমন্ত্রী। লেনিনের দেশের রাষ্ট্রপ্রধান মহামারির পরও যুদ্ধ চালিয়ে যান। চীনের প্রধানমন্ত্রীর চেহারা দেখলেই বুঝবেন তাঁর কৌশল আছে, বুদ্ধি আছে, কিন্তু মন নেই। থাকলেও তা বোঝা যায় না। সে দৃষ্টিকোণে উপমহাদেশও ভুগছে। পাশের দেশ মিয়ানমারে শাসক কী করে, কেন করে, সবাই জানে। কিন্তু কেউ থামায় না তাদের।


বরং আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকেই আমার কোমল বলে মনে হয়। যেকোনো ভাষণে তিনি দেশের গরিব মানুষদের সামাজিক, আর্থিক উন্নয়নের কথা বলেন। তাদের যে তিনি ভালোবাসেন, এটা নিশ্চিত। কিন্তু সবকিছু কি একজন করতে পারে? না তা সম্ভব? চারপাশের মানুষগুলো ঠিক না হলে যা হয় তা-ই ঘটছে দেশে। বাংলাদেশ একা লড়াই করছে না, আজ সারা পৃথিবী ভুগছে। এর থেকে একা বের হওয়া অসম্ভব। সে কারণে সম্মিলিত উদ্যোগ আর পরিকল্পনার কথা বলছেন অনেকে। কিন্তু ঘণ্টা বাঁধবে কে? ওই যে বলছিলাম দুনিয়াজুড়ে মান্য করার মতো নেতা কোথায়?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us