মূল্যস্ফীতি: অর্থনীতির এ দুষ্টক্ষত নিরাময় জরুরি

বণিক বার্তা মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২৪, ১১:৫৩

প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন অভিযাত্রা কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়, বরং এর পেছনে মুখ্য ভূমিকায় ছিল দেশের উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীদের কর্মতৎপরতা, কৃষি ও শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধি তথা কর্মসংস্থান এবং এক বিরাট জনগোষ্ঠীর কঠোর পরিশ্রমে উপার্জিত আয় ভোগের উদ্দেশ্যে ব্যয়; সর্বোপরি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরকারি বিনিয়োগ ও প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রদান। এ কথা অনস্বীকার্য যে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয়বার দেশের শাসনক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বাজেট প্রণয়ন ও সরকারি ব্যয়ে আগ্রাসী ভূমিকা পালনের ফলে জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি প্রায় এক দশক গড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হারে অর্জিত হয়েছে, যা কভিড-১৯ পূর্ববর্তী অর্থবছরে (২০১৮-১৯) ৮ দশমিক ১৫ শতাংশে উন্নীত হয়।


তবে এ উন্নয়নের সুফল সাধারণ জনগণ সমভাবে ভোগ করতে পারছে না। অর্থনীতিতে বৈষম্য বেড়েছে। তুলনামূলকভাবে একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর হাতে সম্পদ কুক্ষিগত হয়েছে। যাদের হাতে অর্থকড়ি এসেছে তারা কেবল কর্মঠ ব্যবসায়ী কিংবা উদ্যোক্তা শিল্পপতি নন, তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অসৎ ব্যবসায়ী, ব্যাংক লুটেরা, বিদেশে অর্থ পাচারকারী, সরকারি অর্থ আত্মসাৎকারী এবং অসৎ আমলা ও রাজনীতিক। দেশের অর্থনীতিবিদ, থিংক ট্যাংক এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পর্যালোচনা ও জরিপে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপের দিকে যাচ্ছে। এর জন্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও যুদ্ধাবস্থায়ই যে কেবল দায়ী তা নয়, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তি ও নীতিনির্ধারকদের যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ঘাটতি কিংবা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থতাও বহুলাংশে দায়ী। এছাড়া রয়েছে সর্বব্যাপী সীমাহীন দুর্নীতি ও কছু অসৎ ব্যক্তির কারসাজি। ফলে অর্থনীতিতে কতিপয় দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এসব সমস্যার পর্যালোচনা ও প্রতিকারের আশু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে অর্থনীতি আরো কঠিন বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে পড়বে। 


অর্থনীতিবিদরা ভিন্ন ভিন্নভাবে আমাদের সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করছেন। কেঊ কেঊ ঊচ্চ মূল্যস্ফীতি, ঋণের ঝুঁকি এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির নিম্নগতিকে মূল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। আবার অনেকে মুদ্রাস্ফীতি, খেলাপি ঋণের সঙ্গে মুদ্রা পাচার, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা ও ক্ষয়িষ্ণু রিজার্ভকে গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখছেন। ভিন্নমত থাকলেও যেসব সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, এদের মধ্যে কয়েকটিকে ‘দুষ্ট ক্ষত’ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়, যেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।


১. মূল্যস্ফীতি: প্রায় দুবছর ধরে মূল্যস্ফীতি ৯-১০ শতাংশে বিরাজ করছে। বিআইডিএসের এক সাম্প্রতিক জরিপে বলা হয়েছে, দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রায় ১৫ শতাংশ, গ্রাম ও শহর সব জায়গাতেই মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ হিমসিম খাচ্ছে। কারণ মূল্যস্ফীতির বিপরীতে আয় ও মজুরি তেমন বাড়েনি। মূল্যস্ফীতির কারণে দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রায় পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে। দারিদ্র্যের হার তো কমছেই না বরং কোথাও কোথাও বাড়ছে বলে কোনো কোনো গবেষণায় বলা হচ্ছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, এশিয়ার ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল প্রভৃতি দেশ দেড়-দুই বছর আগে মূল্যস্ফীতির কবলে পড়লেও বর্তমানে এর প্রকোপ কমিয়ে আনতে পেরেছে। বিশ্ববাজারে ক্রমান্বয়ে দ্রব্যমূল্য কমে গেলেও আমাদের দেশে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক দ্রব্য আমদানিনির্ভর। বেশকিছু সময় ধরে স্থানীয় মুদ্রা টাকার অবমূল্যায়ন এসব দ্রব্যের ক্রয়মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। 


২. খেলাপি ঋণ ও ব্যাংক বিপর্যয়: ব্যাংকের টাকা নামে-বেনামে অবৈধভাবে উত্তোলন করে আত্মসাৎ, ঋণ গ্রহণ করে নিয়মিত পরিশোধ না করে খেলাপি হওয়া—আর্থিক খাতের নাজুকতা ও ব্যাংক বিপর্যয়ের বড় কারণ। দিনদিন খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবমতে, ২০২৩ সালের মার্চে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, তিন মাসের ব্যবধানে জুনের শেষে যা বেড়ে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকায় পৌঁছে। মার্চ ২০২৪ শেষে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা বলা হলেও প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরো অনেক বেশি বলে ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা মনে করেন। আইএমএফের সংজ্ঞা অনুযায়ী যেসব ঋণ রিশিডিউল করা হয়েছে, যেসব ঋণ অবলোপন করা হয়েছে এবং যেসব প্রকল্পের ঋণ মামলায় বিচারাধীন সেসব ঋণও খেলাপি বা নন-পারফরমিং হিসেবে বিবেচিত হবে। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা, অর্থাৎ ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ২৫ শতাংশই খেলাপি ছিল। বাংলাদেশে বর্তমানে ৬১টি ব্যাংক চালু রয়েছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, মাত্র ১৩ ব্যাংকের নন-পারফর্মিং লোনের পরিমাণ ৩ শতাংশের নিচে। অবশিষ্ট ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ অনেক বেশি। পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫৩ শতাংশ, বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ প্রায় ৬৬ শতাংশ ও ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ প্রায় ৮০ শতাংশ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us