বেকায়দায় পড়ে মিয়ানমার জান্তা ফের নতুন ফাঁদ পেতেছে। এবার যখন এনএলডিসহ গণতন্ত্রকামী দলগুলোর বিকল্প সরকার কোনো আলোচনার প্রস্তাবই মানছে না; যখন তিন সশস্ত্র গোষ্ঠীর ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ বা ভ্রাতৃজোটকে চীনা দাওয়াই দিয়েও মানানো যাচ্ছে না; যখন সীমান্তবর্তী সংখ্যালঘু অধ্যুষিত রাজ্যগুলোর পাশাপাশি সংখ্যাগুরু বামার অধ্যুষিত মধ্যাঞ্চলীয় বিভাগগুলোও জান্তার হাতছাড়া হচ্ছে; তখন বার্মিজ জান্তা ‘রোহিঙ্গা কার্ড’ খেলতে চাইছে। নাফ নদের ওপারে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইনে গত কয়েক সপ্তাহের চিত্র প্রমাণ করছে আরেকটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে দিতে মিয়ানমার জান্তা মরিয়া।
গত মার্চ থেকে দেখা যাচ্ছে, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত টাউনশিপ মংডু, বুথিডং, রাথিডং কিংবা রাজধানী সিত্তয়ের অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরের কাছে আরাকান আর্মিবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ দেখা যাচ্ছে। এ-সংক্রান্ত যেসব ছবি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, প্রায় প্রত্যেকের মাথায় নতুন চকচকে টুপি। কারুকাজমণ্ডিত দামি গোল টুপি। জান্তা নিয়ন্ত্রিত জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো তা আবার ফলাও করে প্রচার করছে। সরকারি দপ্তরের ফেসবুক পেজেও শেয়ার হচ্ছে সেগুলো।
এটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই যে, মাত্র কয়েক মাস আগ পর্যন্ত সামরিক জান্তার নির্বিচার নির্যাতনের শিকার এই জনগোষ্ঠী বাধ্য হয়েই বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পুরোনো ছবিগুলো দেখলেই বোঝা যায়, সবাই সবসময় টুপি পরে থাকে না। এত দামি টুপি তো নয়ই। বাধ্য হয়েছে বলেই সম্ভবত তাদের বেশির ভাগ আবার মুখে মাস্ক পরা। এমনও হতে পারে যে, তাদের সবাই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীরও নয়। যে কারণে মুখে মাস্ক লাগাতে হয়েছে।
শুধু তাই নয়, গত কয়েক মাসে কিছু ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, রেহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সামরিক জান্তা। অথচ মাস কয়েক আগেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম খবর দিয়েছিল যে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরগুলো থেকে পুরুষদের ‘অপহরণ’ করে নিয়ে যাচ্ছে সামরিক জান্তা। তাদের নিয়ে কী করা হয়েছে, সাম্প্রতিক ভিডিওগুলো তার প্রমাণ।
বাংলা প্রবাদে দুর্জনের যেমন ছলের অভাব হয় না; তেমনই বার্মিজ জান্তারও ফাঁদের শেষ নেই। বস্তুত ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর ৭৬ বছরের মিয়ানমারকে ৫২ বছরই সামরিক শাসনাধীনে রাখা সম্ভব হয়েছে নানা ফাঁদ পেতে রেখেই। অন্যরা তো বটেই; অং সান সু চির মতো ‘সচেতন ও শক্তিশালী’ নেত্রীও যে গত তিন দশকে জান্তার ফাঁদে কতবার পা দিয়েছেন, তার হিসাব রাখা মুশকিল। যখন সহিংস পথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি, সু চিকে ‘মুক্তি’ দিয়ে অহিংস কৌশল কাজে লাগাতে চেয়েছে। সর্বশেষ ঘরে-বাইরে প্রচণ্ড চাপের মুখে ২০১০ সালের নভেম্বরে মুক্তি পান সু চি। তাঁর দল ২০১৫ ও ২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকারও গঠন করে।