মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুর সফর নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই। সরকারি মহলে যেমন প্রতিক্রিয়া আছে, আছে বিএনপির দিক থেকে এবং তুমুল বিশ্লেষণ চলছে নাগরিক সমাজেও।
লু নিজে খুবই আনুষ্ঠানিক কথা বার্তা বলেছেন। জানিয়েছেন আস্থা স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আবারও এগিয়ে নিতে চায় তার দেশ। ঠিক এ কথটাটাই বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর শেখ হাসিনাকে লেখা এক চিঠিতে। অর্থাৎ এই সংসদ নির্বাচন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তা থেকে বেরিয়ে গিয়ে সামনে তাকাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু দেখতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের দৃষ্টিতে নির্বাচনটি ভালো হয়নি। তারপরও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে সামনের দিকে তাকানোর কথা বলেছে ওয়াশিংটন। বাইডেন প্রশাসনের এই প্রত্যাশাকে সামনে রেখে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিতে চায় বাংলাদেশও।
বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে যারা চর্চা করেন, তারা এ বিষয়ে অবহিত যে, শুরু থেকেই এই সম্পর্কে টানাপড়েন ছিল। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে ঠান্ডা যুদ্ধ- উত্তর পর্বের অস্বস্তি অতিক্রম করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে গভীরতা এসেছে। অতীতে বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে আমেরিকার বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থানের নিরিখে দেখলে, আর বর্তমানে চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিচারে দেখলে বোঝা যায় আমেরিকার হাত ধরা অতটা সহজ কাজ নয়। তবে কূটনীতিকরা মনে করছেন সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।
ডোনাল্ড লু স্পষ্টতই বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সফরে এসে দুই দেশের জনগণের মাঝে ফের আস্থা স্থাপনের চেষ্টা করছি। আমরা জানি, গত বছর বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অনেক অস্থিরতা ছিল। আমরা বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলাম। এতে কিছু মতানৈক্য তৈরি হয়েছিল। সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক। এখন আমরা সামনে তাকাতে চাই, পেছনে নয়। আমরা সম্পর্ক জোরদারের উপায় খুঁজে বের করতে চাই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, মানবাধিকার, শ্রম অধিকার ও ব্যবসার পরিবেশের উন্নয়ন করার বিষয়গুলোও এসেছে।
প্রায় সব দেশের সাথেই আমেরিকার সম্পর্কের সংস্কৃতি ও রাজনীতি প্রায় একই রকম। যারা আমেরিকার রাজনীতি জানেন, বিশ্বায়নের দৌলতে সেই উচ্চাভিলাষী বাংলাদেশিরাও জানেন যে, আমেরিকার রাজনীতি মূলত বিনিয়োগকারী বহুজাতিক কোম্পানি, ব্যাঙ্কার, শিল্পপতি ও অস্ত্রব্যবসায়ীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। নৈতিকতা, মানবাধিকার বা গণতন্ত্রের কথা মুখে উচ্চারিত হলেও বাস্তবে আমেরিকার কাছে গুরুত্বপূর্ণ শুধু লাভক্ষতির চুলচেরা সওদাগরি।