প্রতিহিংসা নয়, রাজনীতি হোক রুচি-সংস্কৃতিসমৃদ্ধ

সমকাল এম আর খায়রুল উমাম প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২৪, ১১:৪৩

দেশে উন্নয়নের আকাশছোঁয়া অগ্রযাত্রা মানুষ দেখছে। তবে আসল বিবেচ্য বিষয়– এত উন্নয়নের সঙ্গে সাধারণ মানুষ কতটা সম্পৃক্ত হতে পারছে। যত প্রকল্প হচ্ছে, অধিকাংশই প্রাক্কলিত ব্যয়ে ও সময়ে শেষ হচ্ছে না। বরং দু-তিন গুণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে। রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট মানুষ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত বিধায় দায়িত্বপ্রাপ্তরা চোখ বন্ধ করে আছেন। সবাই বুঝে গেছেন, রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট থাকতে পারলে সাত খুন মাফ। প্রতিহিংসার রাজনীতিতে এই অবারিত সুযোগের মূল্য নেহাত কম নয়।


দেশে প্রতিহিংসার রাজনীতির সাম্প্রতিক একটা উদাহরণ– পরিচিত এক ভদ্রলোক সারাজীবন চাকরির পাশাপাশি পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। চাকরি শেষে কিছু সামাজিক কাজে যুক্ত হন। নিজ সংগঠনসহ অনেক সংগঠনেরই নীতিনির্ধারক পর্যায়ে ক্রমান্বয়ে উঠে আসেন তিনি। এ ক্ষেত্রে অন্য কোথাও অসুবিধা না হলেও রাজনীতিযুক্ত নিজ পেশাজীবী সংগঠনেই সমস্যা প্রকট হলো। মেয়াদ শেষে এক সংগঠনের কমিটির নির্বাচন ঘোষণা হলে ওই ব্যক্তি তাতে অংশগ্রহণের জন্য সংগঠনের অফিসে গেলে সাদা পোশাকে পুলিশ তাঁকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। সঙ্গী-সাথী থানায় গিয়ে অনেক কসরত করে জানতে পারে, অভিযোগ এসেছে– তিনি একটি ইসলামপন্থি দলের মাঝারি পর্যায়ের নেতা। এক মাস আগে বাংলামোটরে শত শত লোক নিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। যে লোকটা কোনোদিন রাজনীতি করলেন না, তিনি হঠাৎ প্রতিহিংসার রাজনীতির বলি হিসেবে রীতিমতো এক ইসলামপন্থি দলের নেতা হয়ে গেলেন!


এখানেই শেষ নয়। দেশের আইন অনুসারে আটককৃত ব্যক্তিকে নিজেকেই প্রমাণ করতে হবে– তিনি নির্দোষ। অথচ যারা নিজের দোষ ঢাকতে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করল, তাদের কোনো দায় নেই। ফলে ভদ্রলোককে এক যুগ ধরে আদালতের বারান্দায় হাজিরা দিয়ে যেতে হচ্ছে। আরও কতদিন এ দুর্ভোগ চলমান থাকবে, তা একমাত্র ঈশ্বর জানেন। জবাবদিহি-দায়বদ্ধতাহীন সমাজ ব্যবস্থায় এমন শত শত প্রতিহিংসার ঘটনা ঘটছে।


রাজনীতির অন্যতম লক্ষ্য ক্ষমতা। কিন্তু দেশে রাজনীতির একমাত্র লক্ষ্যে পরিণত করা হয়েছে ব্যবসাকে। রাজনীতি লাভজনক ব্যবসায় রূপান্তর হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মসনদে থাকার জন্য যার যেখানে সুযোগ আছে তার পূর্ণ ব্যবহার করে ক্ষমতাবান হওয়ার প্রচেষ্টারত প্রায় সবাই। এতেই দেশে প্রতিহিংসার রাজনীতি রমরমা হচ্ছে। সে কারণেই সংসদে আলোচনার জন্য যত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকুক না কেন, আলোচক দলের আদি নেতার সুখ্যাতি এবং বিরোধী দলের আদি নেতার কুখ্যাতি চর্চা করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব একটা সম্মান রয়েছে– সেই বোধই কাজ করে না। আর বেসামাল শব্দ চয়নে কথা যত কম বলা যায় তত মঙ্গল। 


এ অবস্থা যদি শুধু সংসদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত তাহলে হয়তো বেশি কিছু বলার থাকত না। কিন্তু মাঠে-ময়দানে এমনভাবে এই প্রচারণা চলে, যা সাধারণ মানুষকে লজ্জায় ফেলে দেয়। রাজনৈতিক মতাদর্শে দেশটা এমনভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাতে কেউ অশালীন কথায় কিছু মনে করে না। বরং এসব মানুষের সঙ্গদোষে উৎসাহিত হয়ে প্রতিনিয়ত নতুন উদ্যমে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিয়ে চলেছে। 


দেশের রাজনীতিতে জনগণের আস্থা অর্জনকারী প্রধান দুই দল একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। ক্ষমতা থাকাকালীন আর ক্ষমতাহীন অবস্থার প্রতিটি কার্যক্রমেই অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত কোথাও তাদের অমিল পাওয়া যাবে না। তবে এটা অস্বীকার করা যাবে না– সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অরাজকতা, সহিংসতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ ক্ষমতার বাইরে কেউ থাকতে চায় না। তাই তো বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রমে সংঘটিত সহিংসতায় মানুষের জীবন গেলে তার দায় কেউ নেয় না। রাজনৈতিক দল তাদের কর্মী হিসেবে লাশ নিয়ে ২/১ দিন টানাটানি করে। তারপর আর কেউ খোঁজখবর নেয় না; নেওয়ার কোনো দৃষ্টান্ত নেই। তবে নেতারা পেছনে থেকে প্রতিহিংসার রাজনীতিতে সাধারণ কর্মীদের এগিয়ে দিয়ে নিজেরা সব সময় নিরাপদে থেকে যান। কারণ নেতাদের জীবনের দাম অনেক বেশি। দেশ ও জাতির কল্যাণে যেন তাদের বেঁচে থাকতে হবে। নেতারা না থাকলে দেশে উন্নয়ন করবে কে?


চলমান প্রতিহিংসার রাজনীতি সবকিছু সহ্য করে কিংবা সহ্য করতে প্রস্তুত, শুধু নতুন কথা কিংবা বলা যায়, বিপরীত মত সহ্য করতে রাজি নয়। নিজেদের চারপাশে থাকা চোর-ডাকাত, জালিয়াত-মিথ্যাবাদী, জুয়াড়ি-পাচারকারী, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে একটা মতাদর্শ পরিবর্তনকারী সবাইকে তা সহ্য করে। এদের বিরুদ্ধে এ রাজনীতির লোকেরা মাঝেমধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে বটে; নিন্দা ও অসন্তুষ্টিও প্রকাশ করে, তবে এক পর্যায়ে সবাইকে ক্ষমা করে দেয়। কিন্তু সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে, জীবনযন্ত্রণা থেকে, মানবকল্যাণে, দেশ-কালের পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তির জন্য, সমস্যা সমাধানে, ভুলত্রুটি নিরসনে যদি কেউ মত প্রকাশ করেন বা করতে চান, তাহলে রক্তচক্ষু তুলে তাঁর ওপর পীড়নের হস্ত প্রসারিত করতে ভুল করে না এ গোষ্ঠী। এতে নতুন তথ্য, নতুন মত, নতুন পথপ্রদর্শক, দুর্লভ কণ্ঠ স্তব্ধ হয়েছে বারবার। ফলে সাধারণ মানুষের, দেশ ও জাতির জীবনযন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি দীর্ঘতর হয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us