প্রতি বছরই জাপানে চেরি ফুল ফোটার সময় নানা স্থির ও ভিডিও চিত্র সারা পৃথিবীর নানা পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলে প্রদর্শিত হয়। জাপানে চেরি ফোটার সময়কে বলা হয় হানামি। এই সময় জাপানে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-পরিজন সবাই মিলে একসাথে চেরি ফুল ফোটা দেখতে যাওয়া, সবাই মিলে গল্প করা, আনন্দ করার সময়টি জাপানি অর্থনীতির জন্য কিছু প্রণোদনাও জোগায়।
দ্য জাপান টাইমস পত্রিকায় ২০২৪ সালের ১৫ মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে যে, এই বছর জাপানে হানামি বা চেরি ফোটার মৌসুমে ১.১৪ ট্রিলিয়ন জাপানি ইয়েন বা ৭.৭ বিলিয়ন মার্কিনি ডলার লাভ হবে। ২০২৩ সালে চেরি ফোটার সময়ে জাপানের নগদ আয় হয়েছিল ৬১৬ বিলিয়ন ইয়েন এবং এই বছর সেই আয়ের পরিমাণ ২০২৩ সালের তুলনায় দ্বিগুণ বলেই মনে করছেন জাপানের ওসাকায় কানসাই ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক কাতসুহিরো মিয়ামোতো।
দীর্ঘদিন ধরেই হানামি বা চেরি ফুল ফোটা উপভোগ করাটা জাপানে এক জাতীয় অনুষ্ঠান উদযাপনের মতো বিষয় হয়ে উঠেছে। সুন্দর সাকুরা বা চেরি ফুল এখন পর্যটনের সম্পদ হয়ে উঠেছে, আকর্ষণ করছে অসংখ্য বিদেশি পর্যটকদের, অধ্যাপক কাতসুহিরো মিয়ামোতো মনে করেন।
কোভিডের সময়ে বিদেশি পর্যটকদের জাপানে আসতে দেওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণের কারণে চেরি ফুলকেন্দ্রিক বিদেশি মুদ্রা অর্জনে কিছুটা ধস নামলেও ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ৩২ শতাংশ বেশি বিদেশি পর্যটকেরা জাপানে আসছেন।
২০২৩ সালে যেখানে বিদেশি পর্যটকেরা চেরি ফুলের মৌসুমে জাপানে এসে দিন প্রতি ২৮,৫৮০ ইয়েন খরচ করেছেন, ২০২৪ সালে তারা দিন প্রতি ৩০,২৮৬ ইয়েন করছেন—অবশ্য এর পেছনে জাপানি মুদ্রাস্ফীতিও খানিকটা দায়ী।
২০২৪ সালে জাপানের প্রধান ভ্রমণ এজেন্সি জেটিবি-র মতে, সব মিলিয়ে ৩.৭৩ মিলিয়ন বা ত্রিশ লাখ ৭৩ হাজার বিদেশি পর্যটক জাপানে হানামি বা চেরি ফোটার সময়টায় জাপান ভ্রমণে আসবেন। চেরি ফোটার এই মৌসুম শুরু হয় দেশটির দক্ষিণে কিয়ুশু এলাকায় মার্চের শেষে এবং হোক্কাইডোয় মে মাসের শুরু অবধি অব্যাহত থাকে চেরি ফুলের নান্দনিক বিভার এই ঘোর ধরানো সময়।
চেরি ফুল নিয়ে জাপানে লেখা হয়েছে অসংখ্য হাইকু বা তিন পঙ্ক্তির জাপানি কবিতা। যেমন কোবাইশি ইসসার বিখ্যাত হাইকু ‘প্রস্ফুটিত চেরির নিচে/অপরিচিতরা নয়/সত্যিই অপরিচিত।’
এমনি এই সাদা ও গোলাপি বর্ণের চেরির রূপ যার নিচে দাঁড়ালে অচেনা মানুষকেও চেনা বন্ধুর মতো মনে হয়। অথবা অষ্টাদশ শতকের কবি ইয়োসা বুসোর কলমে—‘আমার সামনের দরজায়/সেই চেরি গাছ/আমাদের মেঘমালার সূচনা।’