হায়দার আকবর খান রনো। এই দেশের রাজনৈতিক ও সচেতন মহলের অন্যতম পরিচিত নাম। যে নামটি সামনে আসলেই কিছু বিষয় সামনে চলে আসে। বামপন্থী রাজনীতি। মার্কসবাদী তত্ত্ব। শুধু তাই নয় পদার্থবিদ্যা থেকে শুরু করে সাহিত্য, ক্লাসিক্যাল মার্ক্সবাদ আর সমসাময়িক ঘটনাবলী, এসব লিখতে যার কলম কখনো থামেনি।
সুলেখক। সদা হাস্যোজ্জ্বল। আত্মঅহংকারহীন এক সাধারণ মানুষ। চেনা মানুষেরা জানেন, গল্পে যার কোনো ক্লান্তি নেই। অসম্ভব স্মৃতিশক্তি নিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার কাঁধে নিয়েও যিনি স্মৃতিচারণ করে অতীতের সব কথার চিত্র সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতেন।
নতুন প্রজন্ম রনো ভাইকে সাধারণ রাজনীতির মানুষ হিসেবে চিনতেন, তাকে দেখলে অতীতের রাজনৈতিক দৃঢ় ইতিহাসে তার সরাসরি ভূমিকা ভাবতেই বোধহয় একটু থমকে দাঁড়াতো।
রনো ভাইয়ের জীবনাবসান হয়েছে ১১ মে ২০২৪ রাত দুইটায়। অনেকদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। ২৪ ঘণ্টা অক্সিজেন সিলিন্ডার সাথে নিয়েই থাকতেন। এই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে তিনি কমিউনিস্ট পার্টি অফিসে এসেছেন। সভায় যোগ দিয়েছেন। এই অবস্থায় তার সাথে কথা বললে, ফোনে কথা বললে একটুও বোঝার উপায় ছিল না যে তিনি অসুস্থ। তার কণ্ঠ, প্রতিটি ঘটনা সম্পর্কে তার মন্তব্য, অতীতের ঘটনাবলি যেন ছবির মতো তিনি তুলে ধরতেন। রনো ভাইকে এভাবে আর পাবো না।
আসলেই কি পাবো না ?
তার লেখা বইগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘শতাব্দী পেরিয়ে’। হায়দার আকবর খান রনো নামটা শুনলেই মনে হয়, তিনি এক শতাব্দীর ইতিহাস রেখে গেলেন। এই ইতিহাসের প্রতিটি পদে তার ভূমিকা সবার জন্য শুধু স্মরণীয় নয়, নতুন ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বোধ করি নতুন নতুন পাঠ হয়ে থাকবে।
কোভিডের সময় তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই সময় অনেকেই ধারণা করেছিল যে, তিনি হয়তো নাও ফিরতে পারেন। কিন্তু অসম্ভব প্রাণ শক্তি দিয়ে তিনি ফিরলেন। কিন্তু আর সরাসরি সব ভূমিকায় অংশ নিতে পারলেন না। এই সময় তার লেখালেখি থেমে থাকেনি। প্রবন্ধ সংকলন, বই প্রকাশ সবই তিনি করে গেছেন নিজের বাড়িতে বসে। এগুলো তার রচিত বইগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে রয়েছে।
তরুণ বয়সে ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং এই মানুষের মুক্তি নিশ্চিত করতে শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্নকে এগিয়ে নিতে আমরাও পথ চলছি।
দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন শুধু শিক্ষা আন্দোলন নয়। তৎকালীন পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামও বটে। ওই সংগ্রামে তার ভূমিকা ছিল অন্যতম। ওই সময়কালে তিনি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, শিক্ষার অধিকার আদায়ের লড়াকু ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন অগ্রজ। কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন।