শতাব্দী পেরিয়ে রনো

ডেইলি স্টার রাহাত মিনহাজ প্রকাশিত: ১১ মে ২০২৪, ১৫:৫৩

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ২০০৪ সালে 'সাম্প্রতিক বাংলাদেশ বিষয়াবলী' নামে একটি কোর্স পড়েছিলাম। অকাল প্রয়াত অধ্যাপক সিতারা পারভীন খুব যত্ন করে কোর্সটি পড়িয়েছিলেন। সেই কোর্সে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীদের ভূমিকা নিয়ে একটি টপিক ছিল। ক্লাসে ম্যাডামের দুর্দান্ত আলোচনা এই বিষয়ে আমাকে জানতে বেশ আগ্রহী করে তোলে।


বিশেষ করে ১৯৭১ সালে কেন বামপন্থীরা বিভক্ত ছিলেন, কেন তারা কিছু ক্ষেত্রে বিভ্রান্ত ছিলেন, এসব বিষয়ে জানার আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। পরের দিকে বিভিন্ন নিবন্ধ, বই ও সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধে বামধারার রাজনীতিকদের ভূমিকা জানার চেষ্টা করতাম। এরই অংশ হিসেবে ২০১৭ সালের এপ্রিলে ফোন দিয়েছিলাম হায়দার আকবর খান রনোকে।


সাক্ষাতের সময় চাইলে অনেক আন্তরিকতার সঙ্গে পরের দিন যেতে বলেন। ঠিকানা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিবেশী। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের কয়েকটি বাড়ি পার হয়েই তাদের বাসা।


ছোটখাটো গড়নের, মৃদুভাষী এই মানুষটি পর দিন সন্ধ্যায় আন্তরিকতার সঙ্গে তার বাড়িতে স্বাগত জানিয়েছিলেন। দীর্ঘ আলাপে তুলে ধরেছিলেন ১৯৭১ সালের তাদের রাজনীতি ও মুক্তি সংগ্রামের অবস্থান। জানিয়েছেন অনেক অজানা তথ্য। তার কাছে প্রথমেই জানতে চেয়েছিলাম, একাত্তর সালে বাম রাজনীতিকদের ঠিক কয়টি উপদল ছিল? আমার স্পষ্ট মনে আছে, এই প্রশ্ন শুনে তিনি একটু হেসেছিলেন। বলেছিলেন, এই প্রশ্ন অনেক সাংবাদিক তাকে করেছেন। অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে রনো জানিয়েছিলেন, 'বামপন্থী রাজনীতিতে কট্টর বিভাজনটা শুরু হয় গত শতাব্দীর ষাটের দশকে। পূর্ব পাকিস্তানে এই বিভাজন কার্যকর হয় ১৯৬৬ সালে। কমরেড মণি সিংয়ের নেতৃত্বে মস্কোপন্থীরা আলাদা লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হন। চীনপন্থীদেরও ছিল আলাদা তৎপরতা। আর একাত্তরে বামদের মধ্যে চারটি ভাগ ছিল। যারা আলাদা আলাদা দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্লেষণ করেছে।


'পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির এক অংশের নেতৃত্বে ছিলেন সুখেন্দু-দস্তিদার-তোয়াহা-হক এবং অন্য অংশের নেতৃত্বে ছিলেন দেবেন শিকদার-আবুল বাশার, কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কিমিটির নেতৃত্বে ছিলেন কাজী জাফর-মেনন-মান্নান ভূঁইয়া আর পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন, যা সর্বহারা নামে পরিচিত ছিল—সেই অংশের নেতৃত্বে ছিলেন সিরাজ সিকদার। আমি কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কিমিটির সক্রিয় কর্মী ছিলাম। আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছি। সে সময় আমরা মুক্তিযুদ্ধে চীনা ভূমিকার প্রকাশ্য সমালোচনা করেছি। যার কারণে চীনা কর্তৃপক্ষ আমাদের ওপর রুষ্ঠ ছিল। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের চীনা অ্যাম্বাসি আমাদের কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত করেনি। যদিও ওই সময়, মানে আশির দশক আমি ওয়ার্কার্স পার্টি করতাম,'—কী সরল-সোজা বিশ্লেষণ ছিল হায়দার আকবর খান রনোর।


ওই সন্ধ্যায় আরও অনেক আলাপ হয়েছিল। কোন প্রেক্ষাপটে তিনি ওয়ার্কার্স পার্টি তথা রাশেদ খান মেননের কাছ থেকে সরে এলেন, সে বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেছিলেন। সে সময় তার কণ্ঠে ছিল কিছুটা বিস্ময়, কিছুটা হতাশা। যাই হোক, সাক্ষাৎকার শেষে ফেরার সময় হায়দার আকবর খান রনো একটি অমূল্য উপহার দিয়েছিলেন। 'শতাব্দী পেরিয়ে' শিরোনামে রনোর ৫২০ পৃষ্ঠার এক অমূল্য গ্রন্থ। যা পরের একমাস এক ধরনের ঘোরলাগা ভালো লাগা নিয়ে পড়েছি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us