চলমান ইসরাইল-ফিলিস্তিন-ইরান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-সংঘাতের ভয়াবহতা নিয়ে পুরো বিশ্ব আতঙ্কিত। আমেরিকা, রাশিয়া, চীন এবং ইউরোপের কতিপয় দেশের যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেশগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কে ফাটল তৈরি করছে। এর প্রভাব পড়ছে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোয়ও। যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহার বৈশ্বিক পরিবেশকে করে তুলছে দুর্বিষহ। অন্যদিকে খাদ্য, জ্বালানি-গ্যাস প্রভৃতির চাহিদা ও সরবরাহব্যবস্থায় শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। ফলে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। মানবাধিকার নিয়ে উচ্চকণ্ঠ যে দেশগুলো, তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্রও স্পষ্ট। তবে সচেতন জনগণ অত্যন্ত সরব। প্রতিবাদী আন্দোলন-সংগ্রামে উত্তাল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনে গত সাত মাসে প্রায় ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, অক্টোবরে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ফিলিস্তিনের ৮০ শতাংশ স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ২৬১ জন শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫ জন অধ্যাপকসহ প্রায় সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ গণহত্যায় নারী-শিশু-কিশোর কেউ বাদ পড়েনি। ইসরাইলি সেনাদের বেপরোয়া তাণ্ডবে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে বাসযোগ্য ভবনগুলো। সব মিলিয়ে এক কঠিন মানবেতর জীবনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের। তারপরও দানবতুল্য মানুষদের বিবেক কোনোভাবেই এতে নড়ে উঠছে না।
ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ করছে। দেশটির প্রায় সব অঙ্গরাজ্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ইতোমধ্যে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেও আন্দোলনকে ব্যাহত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের গণহারে বহিষ্কার, আবাসিক সুবিধা কেড়ে নেওয়া, স্কলারশিপ বাতিল, ফৌজদারি ধারায় মামলার ঝুঁকিসহ বিভিন্ন পুলিশি নির্যাতনের ভয়াবহ প্রেক্ষাপটেও শিক্ষার্থীদের দমনে যুক্তরাষ্ট্র সরকার হিমশিম খাচ্ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর হিসাবে বর্তমানে প্রায় ১৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে এ আন্দোলন চলমান রয়েছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিপুলসংখ্যক খ্যাতিমান অধ্যাপক ও অ্যালামনাই এ আন্দোলনে প্রত্যক্ষ সমর্থন জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা যেসব দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন তা হলো-ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধ থেকে লাভবান হচ্ছে এমন করপোরেশনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক ছিন্ন করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বিনিয়োগ করছে, তাদের তথ্য এবং অন্যান্য আর্থিক বিষয়ে স্বচ্ছতা, ইসরাইলি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রামগুলোর সঙ্গে একাডেমিক সম্পর্ক ছিন্ন করা, ইসরাইলের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা ও ইসরাইলে বিনিয়োগ বন্ধ করা ইত্যাদি।