আমরা ছোটবেলায় ‘মচ্ছব’ খেতে যেতাম। ‘মচ্ছব’ মানে মহাউৎসব। সাধারণত এর আয়োজন হতো শীতকালে যখন ফসল উঠত, বাজারে থাকত শাকসবজি। ‘মচ্ছবের’ আয়োজক বর্ণাঢ্য পরিবার। ওই উৎসবে শত শত লোক আহার গ্রহণ করত। এতে থাকতেন হিন্দু-মুসলমান উভয়ই। ছিল আলাদা আলাদা ব্যবস্থা। মহাআনন্দে স্বাদের নিরামিষ রান্না খেতাম, পাচকরা সাধারণত উড়িয়া। অপূর্ব ছিল তাদের রান্নাকৃত খাবারের স্বাদ। আজকাল গ্রামে গ্রামে এসব অনুষ্ঠান আছে কিনা বলতে পারব না। তবে শহরে শহরে আছে। শহরে এই ‘মচ্ছব’ হচ্ছে ঠিকাদারদের (কনট্রাক্টর) ‘মচ্ছব’। তারা চুপ থাকে সারা বছর। জাগ্রত হয় মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুন মাসে।
এ মাসগুলো আমাদের অর্থবছরের (জুলাই-জুন) শেষ চার মাস। চার মাসে তারা ‘মচ্ছব’ আকারে যে কাজ করে, তা সারা বছরেও হয় না। এই ‘মচ্ছবের’ আয়োজক বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। তারা ‘উন্নয়নের’ কাজ করান কনট্রাক্টরদের দিয়ে। উন্নয়ন মানে ‘ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’। প্রতিবছর শত শত প্রকল্প থাকে, যেসব কাজ সমাপ্ত করতে হয়। এর জন্য বাজেট আছে, বাজেট বরাদ্দ আছে। পরিকল্পনা কমিশন, এর বাস্তবায়ন ইউনিট, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সবাই এর সঙ্গে জড়িত। সবার জন্যই এই ‘মহাউৎসব’। মহাআনন্দের উৎসব। তবে ভাত-সবজি খাওয়ার উৎসব নয়। উৎসব টাকা বানানোর। উৎসব অল্প সময়ে বিশাল টাকার মালিক হওয়া। সবাই মিলেঝুলে খাওয়া আর কী! উপলক্ষ্য কোনো ধর্মীয় উৎসব নয়, নয় কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানও। উপলক্ষ্য হচ্ছে অবকাঠামোর উন্নয়ন, অবকাঠামোর নির্মাণ। এটা এক বিশাল যজ্ঞ। প্রতিবছর দুই লাখ, আড়াই লাখ টাকার ‘খরচের’ উৎসব। যেমন-২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ উন্নয়ন মচ্ছবে ব্যয় কত হবে জানেন? খরচ হবে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। তাও উন্নয়ন বাজেটের আকার কাটছাঁট করার পর। আগে ছিল মূল বরাদ্দ ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। শিক্ষা-স্বাস্থ্যে বেশি বেশি কাটছাঁট করেই ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খরচ হবে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এর আলামত দেখা যাচ্ছে এখন রাস্তায়।