এম সাখাওয়াত হোসেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ও লেখক। স্থানীয় সরকার নির্বাচন সামনে রেখে একদিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসছে। অন্যদিকে, দেশের প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেন এই নির্বাচন বিশ্লেষক।
জাতীয় নির্বাচনের পরে স্থানীয় সরকার নির্বাচন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ২টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে, সামনে উপজেলা নির্বাচন শুরু হচ্ছে ৮ মে থেকে। সার্বিকভাবে এই নির্বাচন কেমন হবে বলে আপনি মনে করেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : জাতীয় নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনেও তো কোনো অপজিশনের পার্টিসিপেশন নেই বলে মনে হয় এখন পর্যন্ত। যদিও সরকারের সিদ্ধান্ত এটা দলীয়ভিত্তিক ভোট হবে না। কারণ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে নাম, নমিনেশন নিয়ে সরকারি দলের ভেতরেই নানান ধরনের সমস্যা এবং কোন্দল সৃষ্টি হয়েছিল। সে কোন্দল এখনো যায়নি। সেই কারণে সরকার নিজস্ব স্বার্থের কারণে এটা করেছে। সেখানেও অপজিশন বলতে যাদের বোঝায় তারা পার্টিসিপেট করতে চান না। জাতীয় পার্টি করবে, সরকারের সমর্থনে যে দলগুলো আছে তারা হয়তো করবে। কাজেই প্রথমেই তো এটা জৌলুশহীন একটা নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনও ক্ষমতাসীনদের মধ্যেই হবে তাই-ই হয়ে আসছে গত দুই উপজেলা নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে। কাজেই এখানে খুব বেশি কিছু বলার আছে বলে মনে হয় না। এটা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন না।
ইতিমধ্যে সংঘাতের নানা রকম খবর পাচ্ছি আমরা। প্রার্থীকে তুলে নিয়ে যাওয়া, অপহরণ, মারধরের মতো খবর আসছে।
এম সাখাওয়াত হোসেন : হ্যাঁ, আসলে এই সংঘাত তো নিজেদের নিজেদের মধ্যে হচ্ছে এবং এটা হবে।
এটা কি বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : হ্যাঁ বৃদ্ধি তো পাবেই। কারণ দলীয় নমিনেশন না দিলেও দলের প্রভাবশালী নেতারা ক্রিয়াশীল আছে এখানে। এছাড়া, বিশেষ করে মেম্বার অফ পার্লামেন্ট, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা কমিটির লোক সব ডিভাইডেড। কাজেই সবাই যে যার কর্র্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য প্রার্থী দিচ্ছে। যেহেতু এখানে কোনো প্রতীকের বিষয় নেই, সবারই ক্ষমতা আছে, সবাই প্রভাব ধরে রাখতে চায়, বিস্তার ঘটাতে চায়। কাজেই বলা যায় সংঘাত বাড়বে, সংঘাত হবেই। এবং সেই সংঘাত কোথায় গিয়ে গড়ায় সেটা এখনো বোঝা যাবে না। যখন নমিনেশন চূড়ান্তকরণ হবে তারপরে বোঝা যাবে। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যেই ধরনের জৌলুশ বা যেই ধরনের কন্টেস্ট অতীতে আমরা দেখেছি সেগুলো এখন আর নেই। এগুলো সবই সরকারের সমর্থিত লোকজন। এখানে সে ইলেক্টেড হোক বা না হোক টাকা-পয়সার খেলা হবে এবং যে যত মাসল ব্যবহার করতে পারবে, সেটা করবে।
বিএনপি দলীয়ভাবে এই নির্বাচনে অংশ নেবে না জানিয়েছে। কিন্তু গণমাধ্যমে যেটা আসছে যে, চেয়ারম্যান পদে বিএনপির কমবেশি ৪৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকছেন। ব্যাপারটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : এগুলো তো লোকাল ইলেকশন, এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতেই পারে। কাগজে-কলমে যাই হোক আমার মতে, বিএনপির কেবল ৪৫ জন স্বতন্ত্র কেন! সব উপজেলাতেই তারা কন্টেস্ট করতে পারতেন। এটা করে, এই প্রসেস যে কতখানি খারাপ সেটা তারা বলতে পারতেন। কিন্তু তারা নির্বাচন বর্জন করেছেন এটা তো তাদের পলিটিক্যাল ডিসিশন। এটা রাইট কিংবা রং সেটা তারা বুঝবেন। কিন্তু আমি মনে করি যে স্থানীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে তারা কী অর্জন করতে পারবেন তা আমি জানি না। জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেও তো কোনো লাভ হয়নি বা সরকারের খুব একটা বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে বলে তো মনে হয় না। যেভাবে প্রেডিকশন করা হয়েছিল সে রকম কিছুই হয়নি বরং উল্টোটাই এখন দেখা যাচ্ছে। কাজেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কন্টেস্ট করলে হয়তো এক রকম হতো। তবে কন্টেস্ট না করলেও তাদের দলের তৃণমূল পর্যায়ের যে সংগঠনগুলোর ভূমিকা কেমন হবে বা থাকবে তা আমি জানি না। যদিও জাতীয় পর্যায়ে বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করেও ক্ষমতাসীনরা পারেনি, কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তেমনটা না হলেও কোন্দল একটা লেগেই থাকবে। এখন বিএনপির সাপোর্টটা অন্য কাউকে দেবে কি দেবে না, দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না বা স্থানীয় সিদ্ধান্ত আছে কি না সেটা তো আমরা জানি না। আমার মতে বর্জনে খুব একটা অ্যাচিভমেন্ট হবে বলে মনে হয় না। এই ৪৫ জন অংশগ্রহণকারী যদি বিএনপির মধ্যম সারির নেতা হয়ে থাকেন তাহলে কি তাদের বিএনপি বহিষ্কার করবে? কী করবে?