আবহাওয়ার পূর্বাভাস আমরা প্রতিনিয়তই পেয়ে থাকি। বিদ্যুৎ পরিস্থিতির এক প্রকার পূর্বাভাসও নিয়মিতই পাওয়া যায়। আবহাওয়া অফিসের মতো বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন সংস্থা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) প্রতিদিনের সম্ভাব্য পরিস্থিতি সম্পর্কে একটা পূর্বাভাস তৈরি করে। তবে তা জনসম্মুখে আসে কদাচিৎ। তা ছাড়া বাস্তবে বিদ্যুতের যে পরিস্থিতি মানুষ প্রত্যক্ষ করে, এর সঙ্গে ওই পূর্বাভাসের মিল কালেভদ্রে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হলেও হতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসও যে বাস্তবের সঙ্গে সব সময় শতভাগ মিলে যায়, তা নয়। কারণ আবহাওয়ার বিষয়টি বিজ্ঞানের একটি শাখাভুক্ত (মিটিওরোলজি) হলেও সেখানে প্রকৃতির হাত অনেক বেশি প্রসারিত থাকে, যা আবহাওয়া পরিস্থিতিকে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সম্পূর্ণ বদলে কিংবা উল্টে-পাল্টে দিতে পারে। এ জন্য পদার্থবিজ্ঞানের মতো অঙ্ক কষে একেবারে নির্ভুল পূর্বাভাস দেওয়া আবহাওয়াবিজ্ঞানের পক্ষে এখনো সম্ভব হয় না।
তবে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির নির্ভুল পূর্বাভাস দেওয়া, অন্ততপক্ষে আবহাওয়ার তুলনায় আরও বাস্তবসম্মত পূর্বাভাস দেওয়া বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পক্ষে সম্ভব। কারণ বিদ্যুৎ বিভাগ কিংবা বিপিডিবি অঙ্কের হিসাবেই জানে যে কোথায় কোন বিদ্যুৎকেন্দ্র কী অবস্থায় আছে? কোন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উৎপাদন ক্ষমতা কত? বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কোন দিন, কোন ধরনের জ্বালানি (গ্যাস, কয়লা, ফার্নেস অয়েল, ডিজেল প্রভৃতি) কী পরিমাণে দরকার হবে? এর মধ্যে কোন ধরনের জ্বালানি কতটা পাওয়া যাবে? এসবই তাদের জানা।
এর সঙ্গে প্রতিদিন বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদার একটা প্রাক্কলনও বিপিডিবি করে থাকে। যদিও সেই প্রাক্কলন কতটা বাস্তবসম্মত, সে বিষয়ে অতীতেও প্রশ্ন ছিল এবং এখনো আছে। এসব কারণে বিদ্যুতের যে পূর্বাভাস আমরা পেয়ে থাকি তাকে পরিস্থিতি সম্পর্কে আভাস বলাই ভালো। এই আভাস থেকে নিজেদের উদ্যোগে খোঁজখবর নিয়ে এবং সারা দেশের গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে গণমাধ্যমকর্মী এবং গবেষকদের প্রকৃত অবস্থার সুলুকসন্ধান করতে হয়।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, আবহাওয়া অফিস পূর্বাভাসে বলেছে, আগামী কয়েক দিনে গরম তীব্রতর হবে। ইতিমধ্যে দেশের বেশির ভাগ জায়গায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে। আগামী কয়েক দিনে তা ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে। এর ওপর বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে গরম হয়ে উঠেছে অসহনীয়। আবহাওয়ার এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের চাহিদা এবং ব্যবহারও স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। এই বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাড়তি জ্বালানি দরকার হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী সেই বাড়তি জ্বালানি সংস্থানের কোনো সুযোগ বাস্তবে নেই। কিন্তু বিপিডিবির প্রণীত দৈনিক পূর্বাভাসে (প্রকৃতপক্ষে আভাস) এর প্রতিফলন দেখা হয়তো দুরূহ ব্যাপার হতে পারে।
আরও একটা উদাহরণমতে, বিপিডিবির ওয়েবসাইটে ১৫ এপ্রিলের যে তথ্য উল্লিখিত হয়েছে তাতে দেখা যায়, ওই দিন সান্ধ্যকালীন সর্বোচ্চ চাহিদার সময় (ইভিনিং পিক আওয়ার) সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে কম-বেশি সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াট। আর দিনের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় (দুপুরবেলা) সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের মতো। কিন্তু ওই দিন দেশের কোথাও কোনো লোডশেডিং ছিল না; অর্থাৎ বিপিডিবির হিসাবে ওই দিন যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে, দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদাও ছিল সেই পরিমাণই। ফলে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। কোথাও কোনো লোডশেডিং দিতে হয়নি।