নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের একটি বক্তব্য ‘ভাইরাল’ হয়ে গেছে। লালপুর উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেতন-ভাতা বাবদ ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা আয় করেছি; যা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খরচ হয়েছে। এই টাকা যে কোনো মূল্যে তুলব। এতে যদি কোনো অনিয়মও হয় তাও করব।’ এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আখতার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইসাহাক আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফুসহ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি-নাটোর জেলা শাখার সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্যে তাঁর সহকারী এবং দলীয় নেতাকর্মী দুর্নীতি করতে উৎসাহিত হবেন। এমপি যদি ১ কোটি টাকা দুর্নীতি করতে চান, তাহলে তাঁর সহযোগীরা কয়েক কোটি টাকা দুর্নীতি করে এমপিকে সেই টাকা তুলে দেবেন। এটা একদিকে যেমন পরিষ্কারভাবে শপথ লঙ্ঘন, অন্যদিকে নির্বাচনী বিধিরও লঙ্ঘন। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী একজন সংসদ সদস্য ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারেন না।’ (প্রথম আলো, ২৮ মার্চ, ২০২৪) বলা বাহুল্য, আজাদ একবার নয়; দু’বারের সংসদ সদস্য। প্রথমবার নির্বাচিত হয়েছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দশম সংসদে। দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়েছেন দ্বাদশ সংসদে নিজ দলের লোকদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তিনিই কিনা প্রকাশ্যে এসব কথা বলেছেন, যাকে ‘দুর্নীতির ঘোষণা’ বলা যেতে পারে। তাও আবার স্বাধীনতা দিবসের আলোচনায়।
বাংলাদেশে দুর্নীতিবিষয়ক সংবাদ নতুন কিছু নয়। সাধারণ মানুষেরও এসব গা-সওয়া হয়ে গেছে। আজকাল এসব নিয়ে কেউ তেমন মাথা ঘামাতে চায় বলে মনে হয় না। এই তো গত ১ এপ্রিল ডেইলি স্টারের খবরে জানা যায়, কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে নির্মীয়মাণ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি প্রায় ৯৩ লাখ টাকায় দুটি পাইপ কাটার কিনেছে। এ ছাড়াও দুটি হাতুড়ি কেনা হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার টাকায়। অথচ অনুসন্ধানে জানা যায়, একটা পাইপ কাটারের দাম ৭ হাজার ২৩২ টাকা এবং হাতুড়ির দাম ১ হাজার ৬৬৮ টাকা। কয়েক বছর আগে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বালিশ আর পর্দা নিয়েও এমন তুঘলকি কাণ্ডের খবর বেরিয়েছিল। তারপর কী হয়েছিল, তা নিয়ে জনগণ আর মাথা ঘামায়নি। হয়তো ইতোমধ্যে অনেকে ভুলেও গেছেন।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, দুর্নীতির কম্বলে দেশ যেন মুড়িয়ে আছে। যারা দুর্নীতি করে, তারা মনে করে, দুর্নীতি করাটা যেন তাদের ‘প্রাধিকার’। মাঝেমধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানোর কথা বলা হলেও এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে খুব শক্তিশালী ভূমিকায় দেখা যায় না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে রহস্যজনক নীরবতা দুর্নীতিকে উৎসাহিতই করে।
কিছুদিন আগে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর লন্ডনে কত সম্পদ আছে, তা জানা গেছে মন্ত্রিসভায় তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর। সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশের একজন সাবেক মহাপরিদর্শক ও তাঁর পরিবারের অঢেল সম্পদের বিবরণ একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। তা নিয়ে বিস্তর আলোচনাও হচ্ছে। কানাডার ‘বেগমপাড়া’ কিংবা মালয়েশিয়ার ‘সেকেন্ড হোম’ নিয়েও কম আলোচনা হচ্ছে না। কিন্তু কমবেশি সবকিছু আলোচনা পর্যন্তই।