পয়লা বৈশাখ ছিল কৃষকদের। বাংলার চাষাদের। এটা ফসলি সন। আকবরের আমলে হিজরি সনের সঙ্গে সৌরবর্ষ মিলিয়ে এই পঞ্জিকা প্রণীত হয়। এতে কৃষকদের বীজ বপন, চারা রোপণ, ফসল কাটার হিসাবের সুবিধা হতো। আর সুবিধা হয়েছিল বাদশাহর খাজনা-আদায়ের। এই সব ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে নানা পণ্ডিতের নানা মত। কিন্তু আমি আমার ছোটবেলায় আমাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখতাম, একটা মোহাম্মদি পকেট পঞ্জিকা আছে ঘরের বেড়ার বাঁশের বাতা আর চাটাইয়ের মধ্যে গোঁজা। ওতেই বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ সব মাসের প্রতিদিনের বিবরণ থাকত। তবে কবে অমাবস্যা, কবে পূর্ণিমা, কবে যাত্রা নাস্তি, তা-ও লেখা থাকত।
আমার দাদিমা, আমার দাদা, আমার জেঠাইমা, আমার জেঠা এই পঞ্জিকা মেনে চলতেন। কবে বীজতলা প্রস্তুত করতে হবে, কবে বীজ বুনতে হবে, কবে ধান কাটতে হবে, সবই হতো বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে। তাঁরা জানতেন না আজ কত জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি, তাঁরা জানতেন আজ পৌষ, মাঘ, না ফাল্গুন। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারির খবর তাঁদের রাখতে হতো না। কারণ, তাঁরা সরকারি চাকরি করতেন না, বেতন পেতেন না।