ঈদ অর্থ আনন্দ। রোজা যত শেষ হতে থাকে, চারদিকের সবার মধ্যে মনে হয় আনন্দের ফুলঝুরি ঝরতে থাকে। আমি ছোট শিশু ঈদ খুঁজি সবার আনন্দে। আমার বয়সে বড় আত্মীয়, বন্ধুরা গল্প বলে নতুন কাপড়ের। আম্মা খুব সুন্দর কাপড় সেলাই করতেন। আম্মার সেলাই মেশিনের শব্দ ছিল আমার ঈদের প্রথম আনন্দ। আম্মার যত্ন–ভালোবাসায় আমাদের জন্য অপূর্ব সুন্দর কাপড় তৈরি হলে আদর করে কাপড় ধরে প্রচণ্ড ভালো লাগার একটি অনুভূতি হতো। নতুন কাপড়ের সুগন্ধ সেই অনুভূতিকে আরও গভীর করে দিত।
নতুন কাপড় বালিশের পাশে রেখে ঘুমিয়ে পড়তাম, একসময় ঘুম ভাঙতেই মনে হতো নতুন দিন। গোসল করে নতুন কাপড় পরে আম্মাকে জিজ্ঞাসা করতাম, এখন কী করব? আম্মা আমাদের দুই বোনকে বলতেন, অতিথি, বন্ধু, বড়দের সবাইকে ঈদ মোবারক বলবে। সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করবে। আমরা পাঁচ ও সাড়ে ছয় বছরের দুই বোন প্রজাপতির মতো ডানা মেলে আমাদের বাড়ির আশপাশের বাড়িতে আনন্দ ভাগ করতে যেতাম। সবার বাড়িতে মায়ের পাশাপাশি বাবা থাকেন।
আমাদের বাবা তাজউদ্দীন আহমদ দেশের মানুষকে ভালোবেসে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করার অপরাধে জেলে বন্দী। ঢাকা থেকে অনেক দূরে—ময়মনসিংহ কারাগারে বন্দী। দু–তিন মাসে একবার দেখা হয়। ছোট বোনটির মনে বাবার কোনো স্মৃতি নেই। বাবা যখন বন্দী হলেন, সে তখন মাত্র পাঁচ মাসের শিশু।
যেদিন বাবার সঙ্গে দেখা করতে ময়মনসিংহ কারাগারের উদ্দেশে ঢাকা থেকে রেলগাড়িতে চড়ে রওনা দিতাম, আমার মনে কেমন যেন ঈদ ঈদ একটা ভাব আসত। রেলগাড়ির একটানা কু...ঝিক ঝিক...শব্দ আমার মনকে আকুল করে দিত। রেলগাড়ির জানালার ধারে বসে ঝিকঝিক শব্দের সঙ্গে মিলিয়ে কতশত শব্দ তৈরি করতাম। মজা লাগত, আমি যতই শব্দ তৈরি করতাম, তার সবই রেলের একটানা সুরের সঙ্গে মিলে যেত। প্রতিবার আমিই হেরে যেতাম।