বাংলা নববর্ষে আমরা সাধারণত দুটি শব্দ ব্যবহার করে থাকি। একটাকে ‘সন’ বলি, আরেকটাকে ‘সাল’ বলি। ‘সাল’ হলো ‘ফারসি’ আর ‘সন’ হলো ‘আরবি’ শব্দ। বাংলা ভাষায় প্রচুর আরবি, ফারসি শব্দ আছে। বাংলাদেশ নামটিও বাংলা নয়; বাংলা এবং দেশ ফারসি শব্দ। বাংলা সন বা সাল প্রচলনের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি অভিমত আছে। প্রথমত, তিব্বতি রাজা ‘সংস্রন’ এ বাংলা সনের প্রবর্তক। এর যুক্তিটা হলো, প্রাচীনকালে বেশ কিছুদিন তিব্বতি রাজাদের অধীন ছিল বাংলা; বিশেষ করে উত্তর বাংলা। তিব্বত সেই সময় অনেক বড় সাম্রাজ্য ছিল। এমনকি অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, তিব্বতি শব্দ ‘বন্স’ থেকে ‘বাংলা’ বা ‘বাঙগালা’ শব্দটি হয়েছে। ‘বন্স’ শব্দের অর্থ হলো ‘ভেজা মাটির দেশ’। বাংলাদেশ নদী-নালার দেশ, তাই ভেজা মাটির দেশই বটে। আর একটি অভিমত হচ্ছে, বাংলা ভূখণ্ডের প্রথম স্বাধীন বাঙালি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শশাংক ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দে। শশাংককে বলা হয় তিনি ‘শকাব্দ’ চালু করেছিলেন।
আবার অনেক সময় অনেক ইতিহাসবিদ বলেন, সুলতান আলাউদ্দিন হুসাইন শাহ্, যিনি স্বাধীন বাংলার সুলতান ছিলেন ১৪৯৩ থেকে ১৫১৯, তিনি বাংলা ‘সন’ চালু করেন। সর্বশেষ অভিমতটি সম্রাট আকবর করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধোপে টিকেছে সম্রাট আকবর তত্ত্বটি। সম্রাট আকবর তত্ত্বটি সম্পর্কে ১৯৫৪ সালে ভারতে পঞ্জিকা সংস্কার কমিটির প্রধান বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহা অঙ্ক কষে ফর্মুলা তৈরি করে প্রমাণ করেছেন আকবরই হচ্ছে বাংলা সনের প্রবর্তক এবং তার সপক্ষে মন্তব্য দিয়েছেন ওড়িশার প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ কাশীপ্রসাদ জয়াসওয়াল এবং সর্বশেষ ড. অমর্ত্য সেন। আমরা মনে করি আকবরই এ বাংলা সন প্রবর্তন করেছেন।