শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আমাদের আইনি কাঠামো খুবই দুর্বল। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে একাধিক আইন থাকলেও সেই আইনগুলোয় ‘যৌন হয়রানি’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। শুধু ২০০৯ সালে করা একটি জনস্বার্থে মামলার রায়ে উচ্চ আদালত শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বন্ধে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন, যাতে বলা হয়েছিল, আইন না হওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনাগুলোকে কর্তৃপক্ষ মানতে বাধ্য থাকবে।
এই নির্দেশনায় যেমন বলা হয়েছে, যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্ত করতে প্রতিটি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ কমিটি গঠন করতে হবে, তেমনি জোর দেওয়া হয়েছে প্রতিরোধমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার ওপরও। তবে গত এক দশকে অভিযোগ কমিটি গঠনের বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ে কিছুটা গুরুত্ব পেলেও, উপেক্ষিত রয়ে গেছে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধানগুলো।
যেমন উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় স্পষ্ট বলা হয়েছে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নতুন সেশনের ক্লাস শুরু হওয়ার আগে একটি বাধ্যতামূলক ওরিয়েন্টেশন ক্লাস নিতে হবে, যেখানে জেন্ডার বৈষম্য ও যৌন হয়রানির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সবার জন্য এ রকম সচেতনতামূলক নিয়মিত প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রতি মাসে একবার অথবা প্রতি ছয় মাসে অন্তত একবার। সরকারি পর্যায়ে সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য চাওয়া প্রয়োজন, এই ওরিয়েন্টেশন ও প্রশিক্ষণের ব্যাপারে তারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে এ পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে।
আদালতের নির্দেশে আরও বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব থাকবে যৌন হয়রানি ও অন্যান্য যৌন অপরাধের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বিধিবিধানসহ দেশের যেসব প্রচলিত আইন রয়েছে, তা বুকলেট আকারে প্রকাশ করা এবং এ-সংক্রান্ত তথ্য শিক্ষার্থীদের কাছে সহজবোধ্য ভাষায় পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু এ নির্দেশনার কোনো প্রয়োগ বাস্তবে দেখা যায় না।
যৌন হয়রানির বেশির ভাগ ঘটনাই যে অভিযোগ পর্যন্ত গড়ায় না তার অন্যতম একটি কারণ হলো, শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নীতিমালা ও এ-সংক্রান্ত আইনি নিয়মগুলো স্পষ্ট নয়। এছাড়া এ ব্যাপারে তথ্য পাওয়াও সহজ নয়। একটি প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি কমিটিতে কারা আছেন, কমিটিতে কীভাবে অভিযোগ করতে হবে, অভিযোগ করলে গোপনীয়তার সুরক্ষা হবে কি না? ভবিষ্যতে কোনো প্রতিশোধমূলক আচরণের শিকার হলে সুরক্ষার কী বিধান আছে? এসব বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে প্রতিষ্ঠানের সবাইকে।
আদালতের নির্দেশনা বলছে যে সরাসরি অভিযোগ কমিটির কাছে ‘মেইল’-এর মাধ্যমেও একজন অভিযোগকারী অভিযোগ জানাতে পারেন। আবার অভিযোগকারী চাইলে কমিটির যেকোনো একজন নারী সদস্যকে আলাদাভাবেও অভিযোগ জানাতে পারেন। অর্থাৎ কমিটির সদস্য কারা এবং তাঁদের সঙ্গে সরাসরি অভিযোগ জানানোর কী কী মাধ্যম রয়েছে, সেসব বিষয় নিয়ে স্পষ্ট তথ্য থাকতে হবে, নির্দেশনাও বলা হয়েছে।