আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়া লাখো মানুষের একজন হতে পেরে আমি সৌভাগ্যবান। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এবং স্বাধীনতার ওপর লেখা অনেক বই পড়ার পরও আমরা অনেকেই অনুভব করি, যে যুদ্ধ আমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, সেই যুদ্ধ সম্পর্কে আমাদের আরও অনেক কিছুই জানার আছে।
মুক্তিযুদ্ধ এমন একটি বিষয় যা নিয়ে কথা বলতে, পড়তে, স্মৃতিচারণ করতে আমরা গর্ববোধ করি। কিন্তু এ বিষয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা হয় না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে বইগুলো আছে, তার সবই প্রাসঙ্গিক ও উপযোগী। এগুলোকে মোটা দাগে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত আত্মজীবনীমূলক বই—যেগুলোতে লেখক মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা, কার্যক্রম ও স্মৃতি বর্ণনা করেছেন। দ্বিতীয়ত যুদ্ধের সার্বিক ইতিহাসমূলক—যেখানে মুক্তিযুদ্ধের আবশ্যিকতার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কারণের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে।
যে অভাবটি তীব্রভাবে অনুভব করি তা হলো, আমাদের এমন কিছু বই প্রয়োজন যেগুলোতে নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ধরনের জটিলতা ও সমস্যা বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু আমাদের নেতা ছিলেন এবং তার নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। তিনি সবাইকে 'যার যা কিছু আছে' তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং সেই ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। কিন্তু, প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তেমন পাওয়া যায়নি। যখন গণহত্যা শুরু হয় তখন আমরা সাহস ও দেশপ্রেম নিয়ে এগিয়ে যাই বিশেষ কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই। আমাদের সব প্রতিক্রিয়াই ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, অকৃত্রিম দেশপ্রেম ও সাহসিকতায় পূর্ণ।
এই প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কীভাবে সশস্ত্র যুদ্ধে পরিণত হলো এবং কীভাবে আমরা সংঘবদ্ধ হয়ে একটি শক্তিতে রূপান্তরিত হলাম, তা নিয়ে প্রয়োজনের অনুপাতে তেমন বই লেখা হয়নি।
এই জায়গায় বড় ভূমিকা রেখেছে মেজর জেনারেল (অব.) মো. সরোয়ার হোসেনের লেখা '১৯৭১: রেজিস্ট্যান্স, রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড রিডেম্পশান' বইটি, যার বাংলা সংস্করণ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।