পাটের পলিথিন প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমদ খান। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আমরা যেটুকু আবিষ্কার করেছি, এ দেশের উপাদান দিয়ে। তা বিশ্ববাজারে পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য কিছু সময় লাগবে। আমরা উদ্ভাবন করেছি; তা বিপণনের দায়িত্ব সরকারের।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার এই প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন, যা সামনের জুলাই মাসে পাব। আমার ক্ষেত্রে সরকার অনেক ইনভেস্ট করেছেন।’
আসলে বিজ্ঞানীর কাজ পণ্য উৎপাদন ও বিপণন না। ফলে তিনি মেশিন কিনে সোনালি ব্যাগ উৎপাদন করবেন এবং সরকার সেটা বিপণন করবে—এই মডেল আজকের যুগে কাজ করে না, অবধারিতভাবে একটা লোকসানি প্রকল্প হতে পারে। বিপণনের নামে সরকারি লোকেরা দুর্নীতির হাট খুলে বসবেন। তা ছাড়া পণ্য ডিজাইন, সাপ্লাই চেইন তৈরি, প্রাইস-কোয়ালিটি কম্পিটিটিভনেস বিষয়ে সরকারি লোকেরা পর্যাপ্ত আধুনিক জ্ঞান রাখেন না।
দরকার ছিল বিজ্ঞানীকে ‘রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’-এ রেখে পেশাদার কোনো কোম্পানিকে (এসিআই, আকিজ, স্কয়ার ইত্যাদি যারা আগ্রহী) দিয়ে পণ্য ডিজাইন, ম্যানুফ্যাকচারিং ও বিপণন মডেলে যাওয়া।
সত্যি বলতে কি, আমাদের অনেক দেরি হয়ে গেছে। পাঁচ বছরেও বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসেনি পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ! উল্লেখযোগ্য, এই উদ্ভাবনের পর গত পাঁচ বছরে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, কোরিয়ান বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগের (বায়োপলি) আন্তর্জাতিক বাজার বিভিন্ন কোম্পানি দখল করে ফেলেছে।
এখানে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, চীন, ইতালি, ভারতের বহু কোম্পানি চলে এসেছে। এসব খেলোয়াড়ের দখলে চলে যাওয়া বাজারে ঢুকতে হলে বাড়তি কিছু লাগবে বাংলাদেশের। বিশেষভাবে ১. মূল্য প্রতিযোগিতা, ২. ম্যানুফ্যাকচারিং প্রযুক্তির উৎকর্ষ, ৩. আকর্ষণীয় ডিজাইন, ৪. কাস্টমার চাহিদা, ৫. ডি কম্পোস্ট সার্টিফিকেশন, পরিবেশগত সনদ ইত্যাদি। পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে বায়োপলি উৎপাদনের জন্য ডাইভার্স কাঁচামালের উৎস।
আমি মনে করি না, সরকারি বিপণন মডেল এসব অ্যাড্রেস করতে পারবে। বাংলাদেশের সরকারি পাট খাত চটের বস্তা আর অচল কার্পেট ছাড়া বিশ্বকে বাহারি পণ্য উপহার দিতে পারেনি। অধিকন্তু দেশীয় বাজারে বায়োপলি হিসেবে সোনালি ব্যাগের সাধারণ ব্যবহার এবং বাধ্যতামূলক ব্যবহারের ইউজ কেস ও পলিসিও তৈরি হয়নি।