আধুনিক যুগে বেতার যে কত শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ এর প্রমাণ একাত্তরে পাওয়া গেছে। হানাদারদের আচমকা আক্রমণে মানুষ যখন দিশেহারা, তখন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র যে ভূমিকা পালন করেছিল, সেটা কোনো দিক দিয়েই সামান্য নয়। বেতার ছিল অন্ধকার ভেদ করে ফুটে-ওঠা একটা আশার আলো। বোঝা গিয়েছিল সবকিছু হারিয়ে যায়নি, প্রতিরোধ তৈরি হচ্ছে। দেশের ভেতরে কোথায় কী ঘটছে তার একটা ধারণা পাওয়া গেল। বিশ্বে খবর ছড়িয়ে পড়ল যে ভিন্ন স্বর শোনা গেছে। স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছে। যুদ্ধ চলছে।
প্রবাসী সরকারের নির্দেশ পৌঁছে যাওয়া শুরু করল মানুষের কাছে। পাকিস্তান সরকার তাদের বেতারে দিনরাত যেসব মিথ্যা কথার প্রচার চালাচ্ছিল, তার জবাবও আসছিল এই বেতার কেন্দ্র থেকে। বেতার কেন্দ্রটিকে হানাদারেরাও কম গুরুত্ব দেয়নি। প্রথমে তারা প্রচার করেছিল হুগলি নদীর মোহনায় একটি জাহাজ থেকে বেতারের আওয়াজ ছড়ানো হচ্ছে; সবটাই ভারতীয় ষড়যন্ত্র। কিন্তু সেই প্রচারে তাদের নিজেদেরও আস্থা ছিল না; তারা অকুস্থল খুঁজে বের করেছিল এবং বোমারু বিমান পাঠিয়েছিল বেতার কেন্দ্রটিকে ধ্বংস করার জন্য। এ কাজটিকে তারা তখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। বস্তুত কালুরঘাট ট্রান্সমিটার কেন্দ্রের ওপর দশ মিনিট ধরে একটানা বোমাবর্ষণ ছিল বাংলাদেশে তাদের প্রথম বিমান হামলা। প্রচার কেন্দ্রটিকে অচল না করা পর্যন্ত স্বস্তি পায়নি।